মুকুট পেয়ে হারিয়েছেন তাঁরা

মুকুট পেয়ে হারানোর মতো ঘটনা বাংলাদেশের জন্য প্রথম হলেও বিশ্বে নতুন নয়। মিস ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মুকুট পেয়ে পরবর্তী সময়ে নানা কারণে মুকুট হারাতে হয়েছে অনেক সুন্দরীকে। আসুন, জেনে নিই তেমন কয়েকটি ঘটনার কথা।

লিওনা গেজ, মিস আমেরিকা ১৯৫৭
একবার তালাকপ্রাপ্ত ও পুনরায় বিয়ে করে দুই সন্তানের মা লিওনা গেজ নিজেকে ‘ভার্জিন’ বলে মিথ্যা দাবি করেছিলেন। বয়স ২১ বছর হলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছিলেন তাঁর বয়স ১৮। মিস আমেরিকা খেতাব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মুকুট হারিয়েছিলেন। এই আমেরিকান সুন্দরী পরবর্তী সময়ে অভিনয় পেশা বেছে নিয়েছিলেন। লিওনা গেজ এরপর আরও চারবার বিয়ে করেন।

মারজোরি ওয়ালেস, মিস ওয়ার্ল্ড ১৯৭৩
মারজোরি ওয়ালেস ছিলেন মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয়ী প্রথম আমেরকিন। বিজয়ী হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার পিটার রেভসনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং একই সঙ্গে ওয়েলশ গায়ক টম জোনসের সঙ্গেও তাঁর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। ফলে মুকুট পরার ১০৪ দিন পর তাঁকে সেটি হারাতে হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ওয়ালেস মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার মৌলিক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।

গাব্রিয়েলা ব্রাম, মিস ওয়ার্ল্ড ১৯৮০
জার্মান সুন্দরী গাব্রিয়েলা ব্রাম ১৯৮০ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় করেন। বিজয়ী হওয়ার পরদিন বয়ফ্রেন্ডের আপত্তির কথা বলে ব্রাম মুকুট ফিরিয়ে দেন। তিনি পরবর্তী সময় বলেন, সংবাদমাধ্যমের চাপ সহ্য না করতে পেরে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও অভিযোগ ছিল, একটি পত্রিকায় নগ্ন ছবি প্রকাশ পাওয়াতেই তাঁর খেতাব বাতিল হয়।

ভেনেসা উইলিয়ামস, মিস আমেরিকা ১৯৮৪
ভেনেসা উইলিয়ামস ছিলেন প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান, যিনি ১৯৮৪ সালে মিস আমেরিকা খেতাব পেয়েছিলেন। মিস আমেরিকা খেতাব পাওয়ার কয়েক মাস পর, তাঁর নগ্ন ছবি ‘পেন্টহাউস’ পত্রিকার একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় তাঁর মুকুট কেড়ে নেওয়া হয়।

অক্সানা ফেদেরোভা, মিস ইউনিভার্স ২০০২
প্রথম রাশিয়ান হিসেবে মিস ইউনিভার্স খেতাব জয়ী অক্সানা ফেদেরোভা আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পড়াশোনায় এতই মনোযোগী ও ব্যস্ত ছিলেন যে বিজয়ী হওয়ার পর মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের ভ্রমণ সূচি মেনে চলতে পারছিলেন না; যা মেনে চলতে ফেদেরোভা চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। ফলে অক্সানা ফেদেরোভার মুকুট ফেরত নেওয়া হয়। এটি মিস ইউনিভার্সের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিজয়ীর খেতাব ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা।

ক্যারি প্রিজিন, মিস আমেরিকা ২০০৯
ক্যারি প্রিজিন ২০০৯ সালে মিস আমেরিকা খেতাব লাভ করেন। প্রতিযোগিতা চলাকালীন প্রশ্নোত্তর পর্বে এক বিচারক সমকামী বিবাহ সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে প্রিজিন সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলেন। মুকুট জয়ের পর প্রিজিনের এ বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তাঁর মুকুট কেড়ে নেওয়া হয়। অবশ্য খেতাব জয়ের কিছুদিন পর অনলাইনে নগ্ন ছবি ফাঁস হওয়াকে প্রিজিনের মুকুট ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়।

ক্রিস্টহেইলি কারিদে, মিস ইউনিভার্স, পুয়ের্তো রিকো ২০১৬
পুয়ের্তো রিকো থেকে মিস ইউনিভার্সে যাওয়ার টিকিট পাওয়ার চার মাসের মধ্যে ক্রিস্টহেইলি কারিদে আপত্তিকর আচরণ করতে শুরু করেন। কারিদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ কারণে তাঁর আর মিস ইউনিভার্সে অংশ নেওয়া হয় না এবং তাঁর খেতাব ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

ইতির এসেন, মিস তার্কি ২০১৭
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে করা অভ্যুত্থান-চেষ্টা ঠেকাতে গিয়ে তাঁর পক্ষের যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরকে ইঙ্গিত করে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন ইতির এসেন। টুইটারে ইতির এসেন লিখেছিলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। ১৫ জুলাইয়ের শহীদ দিবস উপলক্ষে এই মাসিক। এই রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে আমি দিনটি পালন করছি। এই রক্ত আমাদের শহীদদের রক্তকে প্রতিনিধিত্ব করছে।’

টুইটটি তিনি করেছিলেন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার আগেই। কিন্তু সেই টুইট আবার প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়।

সোয়ে ইয়েন সি, মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার ২০১৭
সোয়ে ইয়েন সি মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার ২০১৭ বিজয়ী। সোয়ে ইয়েন সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, রাখাইনে যে সহিংসতা চলছে, এর জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) দায়ী। আরসা প্রতারণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী এই সুন্দরীকে দেওয়া মুকুট ফেরত নেওয়া হবে।

ব্যাংককভিত্তিক মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁদের এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হলো যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ০৫ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ