নিজের ক্যারিয়ার নিজ হাতে নষ্ট করেছেন যে তারকারা

বলিউড, রহস্যময় এ ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গল্পের শেষ নেই। বলিউড ও ক্রিকেট হলো ভারতের সাধারণ মানুষের স্বপ্নের জায়গা। সেখানে নাম লেখানোটা যতটা কষ্টের, নামটা হারিয়ে ফেলা ততটাই সহজ। কত তারকা যে সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন। আবার এমন অনেক তারকা আছেন যারা এক মুহূর্তে নিজের আসন খুইয়েছেন। বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণগুলো সাধারনত নিজেরাই ঘটিয়েছেন। ক্যারিয়ারটা করেছেন বিতর্কিত। এমন কয়েকজনের খোঁজ:

সাইনী আহুজা : বলিউডের এই উঠতি নায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন তাঁর বাড়ির কাজের মেয়ে। সাইনী ও তাঁর স্ত্রী অস্বীকার করলেও, ডিএনএ টেস্টে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে নিজের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়। পরে অভিনেতা নিজের দোষ স্বীকার করেন। ৭ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। পরে অবশ্য তিনি জামিনে মুক্তি পান। সাইনির মতো অভিনেতার এমন ঘটনায় চমকে গিয়েছিল বলিউড। ওই ঘটনার পর নিজের আসন আর কখনোই ফিরে পায়নি এ অভিনেতা। বর্তমানে বাতিল খাতায় তার নাম ধরা যায়।

সঞ্জয় দত্ত: শুধু মাদকই নয়, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর নেশা ছিলো সঞ্জয়ের। সেটা হলো অস্ত্র সংগ্রহ। মুম্বাই নগরীতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে সঞ্জয় দত্তের পিতা কংগ্রেসের এমপি সুনীল দত্ত মুসলিম দরদী হিসেবে চিহ্নিত হন। সঞ্জয়ও তার পাশাপাশি সকলের সেবায় এগিয়ে এসেছিলেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবসেনা সঞ্জয়ের পরিবারকে হুমকি দিলে সঞ্জয় মাফিয়াদের কাছে অস্ত্র চান। আবু সালেম সঞ্জয় দত্তের বাসায় এসে তাকে অস্ত্র দিয়ে যান। মুম্বাই নগরীতে সিরিজ বোমা হামলার পর মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন চালাতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে সঞ্জয় দত্ত মাফিয়াদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছেন। অবশেষে গ্রেপ্তার হন সঞ্জয় দত্ত। সঞ্জয় দত্তকে গ্রেফতারের খবর শুনে বলিউডের সবাই চুপচাপ হয়ে পড়ে। কারণ সিরিজ বোমা হামলার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের সাথে জড়িত হবার জন্যই বলিউডের কেউ সঞ্জয়কে সমর্থন দিতে পারছিলেন না। একমুহূর্তে খলনায়কে পরিনত হয় সঞ্জয়।

শক্তি কাপুর: অভিনেতা হিসেবে তিনি প্রশংসিত। কিন্তু তার চরিত্রে খুত রয়েছে সেটা কারও অজানা কিছু নয়। খ্যাতির সাথে সাথে বিড়ম্বনাও থাকে, শক্তি কাপুরও তার ব্যতিক্রম নন। ২০০৫ সালে একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম শক্তি কাপুরের স্ট্রিং অপারেশন করে তাঁর কাস্টিং কাউচ প্রকাশ্যে আনে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক মহিলা সাংবাদিক নায়িকা সেজে তাঁর কাছে কাজ চাইতে গেলে তিনি বলছেন, ফিল্মে কাজ করতে চাইলে, কাস্টিং কাউচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে! তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ এবং স্ট্রিং অপারেশনের সব অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, ওই ভিডিওটা নকল, ট্যাম্পার করে আমার মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘ সে কথা কে শোনে, পর্দার ভিলেন বাস্তবেও ভিলেন হয়ে যায়। বলিউডে দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিলেন এ অভিনেতা।

মমতা কুলকার্নি: খোলামেলা অভিনয় আর ফটোশুটের জন্য তো নিন্দিত ছিলেনই। হঠাৎ করে জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতের সঙ্গে। দুবাইয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাদক ব্যবসায়ী ভিকি গোস্বামীকে মুক্ত করতে ২০১২ সালের নভেম্বরে তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বিপুল পরিমাণ মাদক পাচারের সময় দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ভিকি। ১৯৯৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। সে সময়কার এ জনপ্রিয় নায়িকা হঠাৎ করে ডুব মারে। ২০০২ সালের পর তাকে আর কোন ছবিতে দেখা যায়নি। বর্তমান ধর্মচর্চা করে তার সময় কাটে।

পারভীন ববি: সত্তর দশকের অভিনেত্রী পারভীন ছিলেন সুন্দরীদের একজন। সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিলেন সমসাময়িক অন্যদের চেয়ে আধুনিক। পোশাক-পরিচ্ছদে চলা ফেরায় ছিলেন ‘সাহসী’ তখনকার আইটেম গানে ছিল নিয়মিত উপস্থিতি। মহেশ ভাটের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ছিল বেশ আলোচনায়। কিন্তু জীবনটা যে তার ছন্নছাড়া। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রেও পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু মনের শান্তি কিছুতেই মিলছিলো না। দেশে এসে ফের পার্টি, নেশা। কিন্তু কারও সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। নানা দুশ্চিন্তার সঙ্গে যোগ হল বয়সের ছাপ। আস্তে আস্তে মুটিয়ে গেলেন। মানসিকভাবে হলেন বিপর্যস্ত। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। অদ্ভুত অদ্ভুত সব অভিযোগ নিয়ে যেতেন আদালতে। এভাবে খানিকটা নিরবে খানিকটা সরবে বেঁচে ছিলেন কিছুদিন। একা থাকতেন মুম্বাইয়ের এক ফ্ল্যাটে। ২০০৫ সালের একদিন তার প্রতিবেশি পুলিশকে খবর দেন যে ববি তিনদিন ধরে দরজা খুলছেন না। এমনকি খাবারের জন্যও বের হচ্ছেন না। পুলিশ তার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে সেখানে পারভিনের লাশ পান। ডাক্তারী রিপোর্টে জানা যায়, কয়েকদিন আগেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

মন্দাকিনী ঠাকুর: দীর্ঘদিন দাপটের সাথে হিন্দি চলচিত্রে অভিনয় করে গেছেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে মন্দাকিনী রাজ কাপুরের বিগ বাজেটের ছবি ‘রাম তেরী গঙ্গা মাইলী’ ছবিতে উত্তাপ ছড়ানো অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেয়। হিন্দি চলচিত্রের আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে প্রচার ছিল। কিন্তু মন্দাকিনী বরাবরই তা অস্বীকার করতো। ১৯৯৬ সালে ‘জারদার’ ছবির মুক্তির পরই তিনি চলচিত্র জগৎ ত্যাগ করেন। ১৯৯০ সালে মন্দাকিনী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ডঃ কাগয়ার টি. রিনপোচি ঠাকুর-কে বিয়ে করেন। রাবজি নামে তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে। বর্তমানে দালাইলামার একজন অনুসারী হিসেবে মন্দাকিনী এবং তার স্বামী মিলে একটি তিব্বতীয়ান মেডিসিন কেন্দ্র পরিচালনা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি