নারায়ণগঞ্জে নাশকতা: মাওলানা মামুনুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাইবে সিআইডি

বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ঘটনায় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাইবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১২টায় সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত ২৫ ও ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও ও হত্যার মত নাশকতা ঘটনো হয়। এতে মামুনুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, সেসব মামলায়ও তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে। সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ১৮টিসহ ২৩ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। ব্যাপক সহিসংতা চালানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। টার্গেট করে হামলা চালনো হয় সরকারি স্থাপনায়। করা হয় অংগ্নিসংযোগ। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত করে হেফাজতিরা। আক্রোশ থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যমও।

সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ও চট্টগ্রাম জেলার ২৩ টি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিআইডিকে।

ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার সহিসংতার ঘটনায় মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি।

ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ ঘটনায় মামুনুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। আমরা অপেক্ষা করছি একটা কেস চলমান আছে। সেটার রিমান্ড চলছে এটা শেষ হলেই আমরা আবার তাকে রিমান্ডে নিয়ে আসব।

সিআইডির তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রয়েছে।

সিআইডি প্রধান জানান, নিবিড় তদন্ত এবং প্রযুক্তিগত ও ফরেনসিক প্রমাণের জন্য মামলাগুলো সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, আমাদের ফরেনসিক আছে, সাইবার পুলিশ আছে। যত ধরনের বিষেশজ্ঞ তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হয় এইগুলো সবই সিআইডির আছে। এরফলে আমরা আমাদের কাজ গুলো করে বাকি পুলিশেদের সাপোর্ট দিতে পারি।

আরো বেশকিছু মামলার তদন্তভার নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

এর আগে সোমবার (১৯ এপ্রিল) মামুনুলকে আদালতে তোলা হয়। আগেই তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামুনুলকে গ্রেফতার করার পর ওইদিন দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ জানান, দেশে বিভিন্ন সময় মামুনুল উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরসহ নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে আরও মামলা হয়েছে।

তিনি জানান, সম্প্রতি সারা দেশে হেফাজতের তাণ্ডবে থানা এবং সরকারি অফিসসহ অনেক কিছুই ভাঙচুর হয়েছে। আমাদের মোহাম্মদপুর থানায়ও ভাঙচুরের একটি মামলা ছিল। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করছিলাম। তদন্তের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ২০২০ সালের এক মামলার সঙ্গে সে জড়িত। এ মামলায় আমরা তাকে জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে পৌনে ১টার দিকে গ্রেফতার করেছি। ওখান থেকে গ্রেফতার করে আমাদের অফিসে নিয়ে এসেছি। এ ঘটনার সত্যতা মামুনুল স্বীকার করেছেন বলেও জানান ডিসি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরের ঘটনা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে হেফাজত। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মামুনুলের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা রয়েছে। আমাদের কাছে যে মামলাটি রয়েছে, তাতে আমরা সত্যতা পেয়েছি।