অবশেষে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সুসংবাদ

করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে গোটা বিশ্বের প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই মহামারি চাকরিপ্রত্যাশী বেকারদের জীবনেও ফেলেছে কালো মেঘের ছায়া। থমকে গেছে চাকরিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া। কোনোটি আংশিক, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোই স্থবিরতা। জনবল চাহিদা থাকলেও নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। গত মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নেমে যায় প্রায় শূন্যের কোঠায়।

টানা ছয় মাস স্থবিরতার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। তবে করোনার বিস্তারকে সঙ্গী করে মানিয়ে চলায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শঙ্কা ও ভীতি থাকলেও সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পথে। অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে। পুরোদমে চলছে গণপরিবহন। জীবিকার সন্ধানে ঘরের বাইরে আসছে মানুষ। গতি ফিরেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও। এ অবস্থায় চাকরিতে নিয়োগে জেঁকে বসা স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে।

গত আগস্ট মাস থেকে নতুন করে প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। স্থগিত বা থমকে যাওয়া নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রমেও গতি আসছে। স্বাভাবিকের তুলনার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কম হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

গত মার্চে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ওই সময় থেকে একের পর এক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সাধারণ ছুটির সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অর্ধশতাধিক নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। জনবল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিগত সময়টাতে আর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। আগস্ট থেকে সেই চিত্র পাল্টাচ্ছে। জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পুনরায় শুরু হয়েছে।

গত ২৯ মে এডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের বেসরকারি অনলাইন পোর্টাল বিডিজবসে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমেছে ৮৭ শতাংশ। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জব সার্কুলার প্রকাশে শীর্ষে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটিতে এপ্রিলে সার্কুলার প্রকাশ হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে মোট বেকার ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার। ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত বেকার উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। আর অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা তিন লাখ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৪টি অধিভুক্ত/অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা সাত লাখ ১৪৮ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিকে বাস্তবতা ধরে নিয়েই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। গত আগস্টে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। আরো বেশ কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অপেক্ষায়।

জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্থগিত হওয়া মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় ঘোষণা করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (এইও) পদে স্থগিত থাকা মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরে ৩৭টি ক্যাটাগরির ৩৪৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৪৩টি পদ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও সিলেট গ্যাসফিল্ডস লিমিটেডের ১৩ ক্যাটাগরির ১০৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে।

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় স্থগিত হওয়া সাতটি ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের সময় দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও আগামী অক্টোবরে প্রকাশ হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জনবল নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সচিবালয় চাহিদা পাওয়ার পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সরকারি ব্যাংকে সমন্বিত নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও প্রক্রিয়া এগোয়নি। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব আরিফ হোসেন খান সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। স্বাভাবিক হলেই সার্বিক কার্যক্রম শুরু হবে।’

বিডিজবসের সিইও ফাহিম মাসরুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা শুরুর সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমে যাওয়া পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে। গত দুই মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিছুটা বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তা এখনো ১০-২০ শতাংশ কম। চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’