বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আপিলের সুযোগ নাই। মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রমন্ত্রী বলেন, আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ডাদেশ কার্যকরের অপেক্ষায় ছিলাম। তাদেরই একজন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। কিছুক্ষণ আগে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত থেকে হাজতবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে সেখানে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘তার স্ত্রী সানা বেগম, বাড়ি নম্বর ১০/এ, রোড নম্বর-০১, ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকা। তিনি সেখানেই বসবাস করতেন।

১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মাজেদ, নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনসহ কয়েকজনের সেখানে অবস্থান ছিল। আব্দুল মাজেদ শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনে অংশগ্রহণ করেননি, তিনি জেলহত্যায়ও অংশ নিয়েছিলেন বলে আমাদের জানা রয়েছে। খুনের পরে তিনি জিয়াউর রহমানের নির্দেশ মোতাবেক বঙ্গভবনসহ অন্য জায়গায় কাজ করেন।

আমরা আশা করি, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারবো। তাকে গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে মুজিববর্ষের একটি শ্রেষ্ঠ উপহার দেশবাসীকে দিতে পেরেছি।’’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশা করি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তার দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারব। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ দিয়ে আমি মনে করি, মুজিববর্ষের একটি শ্রেষ্ঠ উপহার আমরা দেশবাসীকে দিতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের বদলে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছে। ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে তাদের যাতে বিচার না হয়, সে ব্যবস্থাটি পাকাপোক্ত করেছেন। এই খুনিকে আমরা দেখেছি, সেই সরকারের আশীর্বাদে বিভিন্ন দূতাবাসে এবং দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিরত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি আত্মগোপন করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট যত খুনি যেখানেই আছে আমরা সবাইকে ফিরিয়ে আনব। যেখানেই থাকুক তাদের আনার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মাঝে মাঝে বিস্ময়ে হতবাক হই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি দেশে না ফিরতেন তা হলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কোন পর্যায়ে যেত।’

প্রসঙ্গত গতকাল সোমবার রাতে মাজেদকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয় বলে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিশ্চিত করেন।

মাজেদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে সিএমএম আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশে দেন। আবদুল মাজেদ ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আবদুল মাজেদসহ ১২ আসামিকে ২০০৯ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়।

আবদুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর এখন পলাতক আছেন পাঁচজন। তারা হলেন– খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় আব্দুল মাজেদ, নূর এবং রিসালদার মুসলেহউদ্দিন সরাসরি অংশ নেন।