সন্তানকে ফিরে পেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন বাবা-মা

বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তৎপরতায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয়ে নয়জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছেন। যারা বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন।

এরপর থেকেই বিভিন্নস্থানে আত্মগোপণে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। র‌্যাবের মধ্যস্ততায় তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। দীর্ঘ বিরতির পর সন্তানকে কাছে পেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর র‌্যাব সদর দপ্তরে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নয়জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। এদের মধ্যে ৬ জন জেএমবির এবং ৩ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় মন্ত্রী ফিরে আসা নয়জনকে তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা দেন।

এ সময় আত্মসমর্পণ করা শাওন মুনতাহা ইবনে শওকতের বাবা শওকত রহমান বলেন, অনেক দিন ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনিনি। অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। শুনেছি শাওন বিয়ে করেছেন, তার সন্তান হয়েছে। ছেলের বউ বা নাতিকে কখনো দেখিনি। অপেক্ষায় ছিলাম কখন তাদেরকে দেখতে পাবো। আজ সে অপেক্ষা কাটলো। ওদের ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।

শওকত রহমান বলেন, আমার একটি মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে এবং আমার আরেক ছেলে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল থেকে ডাক্তারি শেষ করে বের হয়েছে। সামাজিকভাবে আমার একটা অবস্থান আছে। আমার সব ছেলে-মেয়ে মেধাবী। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ছেলে শাওন পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। এটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। অথচ তার পূর্বের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবে সামঞ্জস্য নয়। শাওনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছিলো।

শাওন অনেকদিন ঘরছাড়া ছিল আমি আমার ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে পাইনি। আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার ছেলে এবং আমার বউমার কোলে বাচ্চার আসবে। এর মধ্যে আমি তাদেরকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।

সন্তান বিপথে চলে গেলে বাবা-মা কি কষ্টে থাকে এটা বোঝানো কঠিন। এই অন্ধকার পথ থেকে ছেলে-মেয়েদের বাঁচাতে হলে সবার আগে তার বাবা-মাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা যাতে জঙ্গিবাদের মত বিপদে না যায় সেজন্য সব থেকে বেশি বাবা-মাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, সহনশীল নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। এর মধ্যে যারা বিপথে চলে গেছে তাদেরকে নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এজন্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অন্যান্য সংস্থাকেও একসঙ্গে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমি সব বাবা-মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সবাই সন্তানদের প্রতি আরও যত্নবান হোন, আপনার সন্তানের মতামতের ওপর গুরুত্ব দেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি সবাইকে বলতে চাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরা সবাই যদি সচেতন হই, তাহলে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে এবং অচিরেই বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ ধ্বংস হয়ে যাবে।

ফিরে আসা আবিদা জান্নাত আসমার মা শাহিদা সুলতানা বলেন, আজকে আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমরা আসমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতাম। কিছুদিন আগে শুনতে পারি, সে যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে তিনি একজন জঙ্গি।

তিনি আমার মেয়েকেও জঙ্গি বানিয়েছেন। একজন জঙ্গির মা হওয়া অনেক কষ্টের। আমি সব মা-বাবাকে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের খেয়াল রাখুন, সময় দিন।