৭ কিলোমিটার বসেছে মেট্রোরেলের লাইন

মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষের আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল লাইনের কাজ।

জানা গেছে, প্রকল্পের সার্বিক পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশের বেশি। চলছে ভায়াডাক্ট, রেল ট্র্যাক বসানোসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান। শুধু তাই নয়, ভায়াডাক্টের ৭ কিলোমিটারে রেললাইন বসানোর কাজও শেষ।

মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরা এলাকায় নির্মিত হয়েছে বিশাল ওয়ার্কশপ। বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পরিচ্ছন্নতা ইউনিট। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।

প্রকল্পের কাজ সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। এ অংশের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। এ এলাকায় স্টেশন রয়েছে ৯টি। এছাড়া ৯টি স্টেশনের উপ-কাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখানে ভায়াডাক্টে রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বসেছে বৈদ্যুতিক লাইন। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণ কাজ চলমান। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটি সমাপ্ত হয়েছে। ৭ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট রেললাইন ও ওভারহেড ক্যাটেনারিস সিস্টেম (ওসিএস) স্থাপনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বর্তমানে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। মেট্রোরেলে ভায়াডাক্ট ও রেলপথ নির্মাণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এরমধ্যে ১৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই ভায়াডাক্টের দৃশ্যমান কাজ দেখতে পাবেন। ভায়াডাক্টের ৭ কিলোমিটার রেলপথ দৃশ্যমান হয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক কাজ চলমান। বৈদ্যতিক কাজ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আমরা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সোশ্যাল স্ট্যাডিও চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্যাকেজ-০৭ এর আওতায় ডিপো এলাকার ওয়ার্কশপ শেডের অভ্যন্তরে ১১টি রেললাইনের মধ্যে ৬টি লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্ট্যাবলিং শেডের অভ্যান্তরে ১৯টি রেল লাইনের মধ্যে ১৪টি রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরা ডিপোর ব্যালাস্টেড রেল ট্র্যাকের জন্য রেল ওয়েল্ডিং কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপোতে ১১ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর মেইন লাইনের ২ হাজার ৬৭৮টি রেল জয়েন্ট ওয়েল্ডিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ৪০৪টি সম্পন্ন হয়েছে। ডিপোতে সিগন্যালিং সিস্টেম ইন্সটলেশনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ডিপোতে পাওয়ার ট্রান্সফরমার, অক্সিলারি ট্রান্সফরমার, সার্ভার স্টোরেজ ইত্যাদি মালামাল পৌঁছে গেছে। মেট্রোরেল চলাচলের ফলে এখানে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে জানায় ডিএমটিসিএল।

মেট্রোরেলের মক আপ গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। ছয়টি যাত্রীবাহী কোচ মেট্রো ট্রেন সেটের নির্মাণ ডিসেম্বর মাসে জাপানে সম্পন্ন হবে। ছয়টি যাত্রীবাহী কোচ সম্বলিত প্রথম মেট্রো ট্রেন সেটের নির্মাণ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে জাপানে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেটের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের প্রথম সপ্তাহে এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম মেট্রো ট্রেন সেটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট জাপানের কোবে বন্দর থেকে শিপমেন্টের মাধ্যমে ১৫ এপ্রিল মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে। এর পর মোংলা থেকে ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছে যাবে স্বপ্নের মেট্রোরেল কোচ।

রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১শ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।