রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের প্রতি রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

আবুল বারকাত বলেন, ভারত, গণচীন, রাশিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব বৃহৎ ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের কাছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে তাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করতে হবে।রোহিঙ্গা সংকটে রাজনৈতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি চালানোর পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, যদিও আমরা কূটনীতিবিদ না, রাজনৈতিক কূটনীতি দিয়ে পুরো সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা মনে করি না। রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি, ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি যেটা, চালানো ভালো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, মিয়েনমারের যে সব রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের যথাযথ নিবন্ধন এবং আশ্রয় শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করা এই মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের থাকা খাওয়া, চিকিৎসা সেবা প্রদান আমাদের মানবিক-নৈতিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সরকারের সমন্বিত এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে তা জোরদার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

বক্তারা আরো বলেন, মিয়েনমারে রোহিঙ্গা নিধনসহ যে বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চলছে, এ ধরনের নগ্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক বর্বরতার নজির কেবলমাত্র ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতা ও নির্বিচারে গণহত্যার সঙ্গে তুলনীয়। মিয়েমমার সরকারের এই অমানবিক নিষ্ঠুর গণহত্যার নীতি ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত নিপীড়নের নিন্দা জ্ঞাপনের ভাষা আমাদের জানা নেই। বিশ্ব বিবেকের কাছে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান নির্বিশেষে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের এই এই অমানবিক নিধনযজ্ঞ, হত্যা, উৎপীড়ন বন্ধের জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

এসময় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় ভারত, চীন, রাশিয়া জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ সব রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের সহযোগিতা এবং সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

মিয়েনমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত আং সান সু চি সরকারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ নিঃশর্ত বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকার, সংবাদমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। এ জন্য সরকারের বিশেষ সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা প্রসারিত ও জোরদার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি