সাফাত-নাঈমরা এখন কে কোন কারাগারে থাকছেন?

মনে আছে রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার আসামীদের কথা? হয়তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। কেননা, তাদের ধর্ষণ কাণ্ড সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কেমন আছেন তারা? কারাগারে তারা কেমন দিন কাটাচ্ছেন? কে কোন কারাগারে থাকছেন? তাদের অনুসন্ধান মেলেছে নতুন তথ্য।

ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ এখন কারাগারে ছিমছাম ও শান্ত পরিবেশে আয়েশী জীবনযাপন করছেন। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে হওয়ায় তাকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি সেলে। এখানে এক রুমে একাই থাকছেন তিনি। তার পিসি বা প্রিজনার কার্ডে মাসে লাখ টাকার ওপরে জমা হয়। ওই টাকার বিনিময়ে আরাম আয়েশেই দিন পার করছেন তিনি। কাশিমপুর ও কেন্দ্রীয় কারাগারের সংশ্লিষ্ট কারা-কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

কারা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, অন্য চার আসামির মধ্যে নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিম কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সাধারণ ওয়ার্ডে, সাদমান সাকিফ ও গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেনকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর পৃথক দুটি কক্ষে। এছাড়া দেহরক্ষী রহমত আলীকে রাখা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারা কর্মকর্তা বলেন, ‘হাই সিকিউরিটি সেলে সাধারণত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের রাখা হয়। এখানকার পরিবেশ সব কারাগারের পরিবেশের তুলনায় উন্নত। ভয়ঙ্কর অপরাধী কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ জঙ্গি সদস্যদের এই সেলে রাখা হয়। তাদের যে ধরণের পরিবেশে রাখা হয়, সাফাতকেও একই পরিবেশে রাখা হয়েছে। তার পিসি বা প্রিজনার ক্যাশে মাসে তিন থেকে চারবার মোটা অঙ্কের টাকা জমা হয়। ফলে সেখানে থেকেও আয়েশী জীবনযাপন করছেন সাফাত।’

আরেক কারা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই তাকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ আসামি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। একারণে তাকে হাই সিকিউরিটির কোনও রুমে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ করা যাবে না।
সাফাত কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সে তো ভয়ঙ্কর কোনও আসামি না। এখানকার পরিবেশ সুন্দর, থাকা-খাওয়ার কোনও সমস্যা নেই, ঘুমানোর কোনও সমস্যা নেই। তাই সাধারণ কয়েদির মতোই ছিমছাম পরিবেশে হাজতি আসামি হিসেবেই আছে সাফাত।’

এদিকে ধর্ষণ মামলার আরেক আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সাধারণ ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের একটি কক্ষে অন্তত ২০ জন ছিঁচকে অপরাধী রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, ‘ নাঈম আশরাফকে কেন্দ্রীয় কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০ থেকে ২৫ জন হাজতি আসামিদের একটি কক্ষেই রাখা হয়। জেলকোড অনুযায়ী যেভাবে থাকার কথা সেভাবেই নাঈম আশরাফকে রাখা হয়েছে।’

অন্যদিকে আসামি সাদমান সাকিফ ও সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেনকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সাধারণ ওয়ার্ডের পৃথক দুটি কক্ষে অন্য আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। এ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শুভ্রত কুমার পাল বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ড চিত্রাতে আছে সাদমান সাকিফ। একই ওয়ার্ডের পৃথক কক্ষে আছেন চালক বিল্লাল হোসেন।’

তবে আসামিদের পিসি বা প্রিজনার ক্যাশে কত জমা হয় সে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়না। তবে যতো টাকায় আসুক তা দিয়ে কারাগারের ক্যান্টিন থেকেই খাদ্য কিনতে হয়।

একই মামলার সব আসামির ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রাখার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুভ্রত কুমার পাল আরও বলেন, ‘যেহেতু তারা একসঙ্গে একই অপরাধ করেছেন, তাই চারজনকে আলাদা আলাদাভাবে রাখাই সঙ্গত। যেহেতু আমাদের চারটি কারাগার রয়েছে কাজেই সবাইকে একত্র না রেখে পৃথক পৃথক কারাগারে রাখা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, বিল্লাল ও রহমত আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। পরে গত ১১ মে রাতে সিলেট থেকে অভিযুক্ত সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ সদরের বিশেষ টিম ও সিলেট পুলিশ। ১৬ মে সন্ধ্যায় বিল্লালকে পুরান ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে এবং রহমতকে গুলশান এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরদিন রাতে নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার করা হয়। সাফাত আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে। সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের মালিকের ছেলে এবং ওই গ্রুপের পরিচালক। ওই ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটি বিচারাধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি