মধ্যযুগীয় কায়দায় শালিসে প্রতিবন্ধীর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি

মধ্যযুগীয় কায়দায় শালিস করে এক প্রতিবন্ধীর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জেলার সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের। সেখানে এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় গ্রাম্য শালিশে ৪০ হাজার টাকায় দফারফা করা হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি শালিস অযোগ্য হলেও গত ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় মাতব্বররা মোটা অংকের টাকায় মীমাংসা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তৃতীয় বারের মতো অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

আদালত সূত্র থেকে জানা যায়, জেলা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মৃত আমির আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেনকে এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গত ২ আগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে জজ আদালতেও জামিন আবেদন না মঞ্জুর করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

গাইবান্ধা কোর্ট ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দীন জানান, মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইসমাইল হোসেনের জামিনের আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক রমেশ কুমার দাগা শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করেন। ওই আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. আনিছ মোস্তফা তোতন। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা শালিশ অযোগ্য। ফলে আদালত শালিশ নামা গ্রহণ করেননি। কারাগারে থাকা ইসমাইল হোসেনের মনোনীত কৌশলী শাজাহান আলী স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি মীমাংসা হয়েছে মর্মে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীকে আদালতে হাজির করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত ঘটনাটি শালিশ যোগ্য নয় বলে ইসমাইলের জামিন নামঞ্জুর করেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাবশালী ইসমাইল হোসেন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গ্রামের মাতব্বররা ঘটনাটি মীমাংসার জন্য মামলার বাদীকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় মৃত বনিজ উদ্দিনের বাড়ির উঠানে শালিসের আয়োজন করা হয়। শালিসে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুল করিম সরকার। উপস্থিত ছিলেন, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আতোয়ার রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুছসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

তারা আরও জানান, ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে গ্রামের মাতব্বররা। অভিযুক্তের পরিবারের কাছে গোপনে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ৪০ হাজার টাকা মামলার বাদীকে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বাকি টাকা মাতব্বররা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য মাতব্বরদের সাথে ইসমাইলের পরিবারের ৮০ হাজার টাকা চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ওই টাকা হাতে বুঝে নিয়ে মাতব্বররা শালিসের আয়োজন করে। কিন্তু প্রতিবন্ধী কিশোরীর ভাই মামলার বাদীকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় ৪০ হাজার টাকা। এরমধ্যে নগদ দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। বাকি ৩০ হাজার টাকা মাতব্বর দেলোয়ার হোসেনের কাছে থাকবে। ইসমাইল হোসেন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সেই টাকা বাদী পাবে।

পুলিশ জানায়, ফুলবাড়ী গ্রামের মুদি দোকানদার ইসমাইল হোসেন গত ১ আগস্ট গভীর রাতে প্রতিবন্ধী মেয়েটির ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় তার বাড়ির লোকজন টের পেলে ইসমাইল পালিয়ে যায়। পরদিন ওই কিশোরীর ভাই খাজাদুল ইসলাম ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে প্রতিবেশী মৃত আমীর আলীর ছেলে ইসমাইলকে একমাত্র আসামি করে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা করেন। পরে গত ২ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইসমাইলকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে ইসমাইল কারাগারে রয়েছে।

মামলার বাদী খাজাদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ৪০ হাজার টাকায় বিষয়টি আপোস-মীমাংসা করে দিয়েছেন। শালিসে ১০ হাজার টাকা আমার হাতে দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা দেলোয়ার মেম্বারের কাছে জমা আছে। ইসমাইলের জামিন হওয়ার পর সেই টাকা দেবে।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাঁন মো. শাহরিয়ার মুঠোফোনে বলেন, ‘এ ঘটনা শালিস অযোগ্য। মীমাংসার যোগ্য নয়। স্থানীয়রা বিষয়টি কোনোভাবেই মীমাংসা করতে পারেন না। ফলে আদালত এসব ছোলেনামা বা মীমাংসানামা গ্রহণ করেন না। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত চার্জশীট (অভিযোগপত্র) জমা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ