বেড়েছে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার, কথা বলার হার কমেছে

২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পযর্ন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। আবার মানুষ ঘরে থাকতেও বাধ্য হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছে। নেহায়েত কোনও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। আর এর প্রভাব পড়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহারে। এ সময়ে মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তবে মুঠোফোনে কথা বলার হার কমেছে।

একটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আইআইজি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ছুটিতে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত ছুটির সময়ে কমে যায়। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশি বিপদে পড়েছে করপোরেট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সব অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় করপোরেট খাতে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার প্রায় শূন্যে নেমে গেছে। বাসাবাড়িতে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বাড়লেও আইএসপিগুলো পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড করছে না। ফলে ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়েনি, বরং মোট ব্যবহার কমে যেতে পারে।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার সেই অর্থে বাড়েনি। বাসাবাড়িতে বাড়লেও কমেছে করপোরেটে। ফলে গড় চিত্র আগের মতোই। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ১৬০০-১৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহূত হচ্ছে।

তিনি জানান, বর্তমানে তারা সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় সমস্যা দেখছে, কোথায় কোথায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন, নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে আগামী ৫-৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের কাছে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। তাতে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান করপোরেট ইন্টারনেট সেবা দেয়, তারা বড়ো ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। যারা বাসাবাড়িতে সেবা দিচ্ছে, তাদের অবস্থাও খারাপ। তারা ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারছে না। কারণ তাদের ওপেক্স বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের সবার কথা ভাবতে হচ্ছে।

জানা গেছে, মোবাইল, পিসি ও ল্যাপটপে নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স, হইচই চ্যানেল দেখার হার বেড়েছে। বেড়েছে ইউটিউব দেখার পরিমাণও। এছাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশিক্ষণ থাকছেন। মেইল আদান-প্রদান বাড়ছে। সঙ্গে বেড়েছে অ্যাটাচমেন্ট পাঠানোর হারও।

এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো তাদের প্যাকেজ নতুন করে সাজিয়েছে। কোনো কোনো অপারেটর আগের দামে বেশি ডাটা অফার করছে। কোনো অপারেটর তাদের ডাটার দাম কমিয়েছে। জানা গেছে, ডাটার পরিমাণ বৃদ্ধি, দাম কমানো ইত্যাদিতে এগিয়ে আছে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। তবে মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, তাদের ডাটার (ইন্টারনেট) ব্যবহার বাড়লেও কমেছে ভয়েস কলের পরিমাণ।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘আমাদের ভয়েস ট্রাফিক ৮ শতাংশ কমেছে এবং ডাটার ব্যবহার বেড়েছে ২১ শতাংশ। কিন্তু ডাটা মূল্যে ভর্তুকি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনা মূল্যে এবং খরচের তুলনায় কম মূল্যে দেওয়ার কারণে রাজস্ব আয়ে এর কোনো প্রতিফলন পড়বে না। এছাড়া মোবাইল রিচার্জ ১৭ শতাংশ ও রিটেইল পয়েন্টে টেলিকম সেবা বিক্রি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে আমাদের সার্বিক রাজস্ব ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অনেক গ্রাহকই টেলিকম সেবার ব্যবহার কমাতে বাধ্য হবেন; যেহেতু রাষ্ট্র ঘোষিত জরুরি সেবা হওয়া সত্ত্বেও আমরা গ্রাহকদের রিচার্জ সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।’

বাংলালিংকের জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অপারেটরটির ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ১৮ শতাংশের মতো বেড়েছে, তবে ভয়েস কল কমেছে ১৭ শতাংশের মতো। অন্যদিকে অপারেটরটি কিছু কিছু ইন্টারনেট প্যাকেজে ৪০ শতাংশের মতো দাম কমিয়েছে। কিছু কিছু প্যাকেজের ডাটা ভলিউম বাড়িয়েছে অপারেটরটি।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব বলছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার। মোট ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। এর মধ্যে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাকিরা ব্রডব্যান্ড ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করেন।