যে ১০টি ব্যাপারে অবশ্যই গুগল করবেন না!

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাত্রই গুগলের সঙ্গে পরিচিত। গুগল নামের এই সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায় পৃথিবীটাকে আমরা প্রায় হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়ে গেছি। যে কোন বিষয়ে অনুসন্ধান করতে, যে কোন তথ্য পেতে, কোন কিছু সম্পর্কে জানতে হলে আজ গুগলের জুড়ি মেলা ভার। তবু কিছু বিষয় আছে যেগুলো গুগলে খুঁজতে না যাওয়াই ভালো। খুঁজলে লাভ তো হবেই না, বরং ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। চলুন জেনে আসি এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে-

১. রোগের লক্ষণ
বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় আমরা মাঝে মাঝেই গুগলে সার্চ করি রোগের লক্ষণ, প্রতিকার প্রভৃতি সম্পর্কে জানার জন্য। এ কাজটি করা কখনোই উচিত নয়। কেননা, সেখানে বহু ওয়েবসাইট থাকে এসব ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যেগুলোর বেশিরভাগই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা পরিচালিত নয়। রোগের লক্ষণ সম্পর্কে এসব ওয়েবসাইটে যা লেখা থাকবে তা বেশিরভাগ সময়ই আমাদের কোন কাজে আসবে না। উপরন্তু, বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য দিয়ে এগুলো আমাদের মনে ভীতির উদ্রেক করবে। তাই স্বাস্থ্যঘটিত যেকোনো সমস্যায় ‘গুগল ডাক্তার’ এর কাছে না গিয়ে একজন ভালো, আসল ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

২. সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কিছু
আপনার যদি কোন অস্ত্র তৈরির শখ থেকে থাকে, তবে তা শেখার জন্য আবার গুগলে সার্চ করে বসবেন না। না, না, হাসি নয়! সিরিয়াসলি বলছি, এমন হয়ত অনেকেই আছেন, যাদের কৌতুহল থাকে বোমা কি করে বানায় একটু দেখি তো! তাদের বলছি, খবরদার এ কাজ করতে যাবেন না। অনেক দেশের নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সবসময়ই এধরনের সার্চ কারা করেছে তার উপর নজরদারি করে থাকে। সে সংস্থাগুলোর ডাটাবেসে এসব সার্চের আইপি আড্রেসগুলো দেখা যায়। তাই, নানা রকম উটকো ঝামেলা এড়াতে চাইলে এধরণের কৌতুহল থেকে বিরত থাকুন।

৩. ক্যান্সার
এমন অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো সম্পর্কে অল্প জানা ভালো। অল্প জানলেই শান্তিতে থাকতে পারবেন। বেশি জানলে এবং বুঝলে সমস্যা। ছোট-খাট অনেক রোগের লক্ষণও অনেক সময় ক্যান্সারের মত বড় বড় অসুখের সাথে মিলে যায়। যেমন, অনেক সময় অনেকে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব..প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিলে গুগলে এর কারণ খুঁজতে যায়। এসব লক্ষণ কিন্তু ক্যান্সারের রোগীরও থাকে, আবার সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সামান্য দুর্বলতার কারণেও হতে পারে। তাই যদি গুগলে সার্চ করে, অযথাই আপনার ক্যান্সার হয়েছে বলে ধরে নেন, তবে এটা শুধু দুশ্চিন্তা বাড়াবে, আর বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে আপনাকে। এর চেয়ে বেশি লাভ আর কিছু হবে না।

৪. ছারপোকার উপদ্রব
যারা হোস্টেলে বা মেসে থাকে তাদের অনেকেই জানে ছারপোকার উপদ্রব কি জিনিস। রাতের ঘুম হারাম করতে এই ছোট্ট ভয়ঙ্কর প্রাণীটির জুড়ি মেলা ভার। যদি রাতের ঘুম খারাপ করতে না চান, দয়া করে ছারপোকার উপদ্রব কি জিনিস এ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করতে যাবেন না। শুধু ছারপোকা নয়, এমন ক্ষতিকর কোন পোকামাকড়ের সংক্রমণ নিয়ে গুগলে সার্চ না করাই ভালো।

৫. ত্বকের অবস্থা
মানুষের শরীরে অনেক ধরণের চর্মরোগ দেখা যায় যেগুলো বেশিরভাগই মারাত্মক ক্ষতিকর। কিছু চর্মরোগে আক্রান্ত মানুষের শরীর তো ভয়াবহ দেখা যায়। প্রায় সবরকমের চর্মরোগে আক্রান্ত মানুষের ছবি গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যায়। সেসব ছবি এত গোলমেলে যে সেগুলো সার্চ দিয়ে না দেখাই ভালো।

৬. ধুমপায়ীর শ্বাসতন্ত্র
অনেকেরই ধুমপান আসক্তি থাকে। এ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে কেউ যদি গুগল থেকে উদ্দীপনা খুঁজতে যায় তবে তা করতেই পারে। মাদকাসক্তদের শ্বাসতন্ত্রের কি পরিণতি হয় এর অনেক উদাহরণ রয়েছে সেখানে। তবে তা এতো ভয়াবহ যে, এ কাজ যত না করা যায় ততই ভালো। লাভের লাভ কিছু হবে কিনা সন্দেহ, মাঝখান থেকে শুধু শুধু ভয় পাওয়া হবে।

৭. ভয়ঙ্কর জীবজন্তু
যদি নতুন ধরণের কোন ফোবিয়ায় আক্রান্ত হতে না চান তবে ভয়ঙ্কর জীবজন্তু সম্পর্কে গুগলে সার্চ না করাই ভালো। পৃথিবীতে এত এত ভয়াবহ সব জীবজন্তুর বাস যে সেগুলো সম্পর্কে জানলে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে পারা যায় না। হয়তো খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল আপনার আশে-পাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন সব জীবজন্তু। শেষে ভয়ে আপনার ঘুরে বেড়ানোর শখও লাটে উঠতে পারে।

৮. নিজের নাম
নিজের নাম দিয়ে গুগলে কখনো সার্চ দিবেন না। ইন্টারনেট ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে গেছে যে সেখানে প্রাইভেসি মেইনটেইন করা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গেছে। দেখা গেলো, আপনার নামেই হয়ত ছড়িয়ে গেছে খারাপ কিছু। আপনার ছবি ব্যবহার করে খারাপ কোন প্রচারণা চালাচ্ছে কেউ। বিভিন্নভাবে ট্রল বানাচ্ছে আপনাকে নিয়ে। লজ্জায় আর অপমানে হয়তো আপনি কুঁকড়ে যাবেন। ইন্টারনেটের জগৎ থেকে সেগুলো মুছে দিতে চাইবেন। এই ব্যাপারটা কিন্ত এতটা সহজ নয়। তাই, কী দরকার অহেতুক ভেজালের!

৯. ব্লাকহেড দূর করা
মেয়েরা বিশেষ করে করে এ কাজটি। নাকের উপর ব্ল্যাকহেড জমলেই উঠে-পরে লাগে কি করে এটি দূর করা যায়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ পাওয়া যায় গুগলে। পরামর্শগুলো আপনাকে ভয় পাইয়ে দিবে না বা আপনার কোন ক্ষতি করবে না। তবে আপনার অনেক সময় নষ্ট করবে সেগুলো, যদি বিশ্বাস করেন। ব্ল্যাকহেডস নির্মূলের কোন উপায়ই তেমন একটা কাজে দেয় না। কিছু সময়ের জন্য দেখতে হয়ত খানিকটা ভালো লাগতেও পারে, তবে তা বেশি সময় স্থায়ী হয় না। কাজেই, দূরে থাকুন এমন জিনিস গুগল খুঁজে বের করা থেকে।

১০. বাচ্চা জন্ম দেওয়া
মহিলারা গর্ভাবস্থায় অনেক সময় গুগলে সার্চ করে দেখতে চায় বাচ্চা জন্ম দেয়ার প্রসেসটা কতটা কষ্টের। অনেক সময় টিভিতে, বিভিন্ন সিনেমায় দেখতে পাওয়া যায় মায়েরা কি পরিমাণ কষ্ট ভোগ করে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে। সেখানে যে পরিমাণ কষ্ট দেখায়, তার চেয়ে হাজার গুণ কষ্ট একজন মাকে ভোগ করতে হয় বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে। তাই এসব ব্যাপার গুগলে না খোঁজাই ভালো। শেষে নরমালি বাচ্চা জন্ম দেয়ার কথা ভাবতেই ভয় পাবে মায়েরা, আগেই সিজার করে ফেলবে। যা মা ও শিশুর স্বাস্থোর জন্য যে কোন উপকার বয়ে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম