মিয়ানমার নেতাদের বিচারের জন্য উদ্যোগ

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূলের জন্য দেশটির নেতাদের বিচারের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতনের অপরাধে সু চিসহ মিয়ানমারের নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় তুলতে দু’জন ব্রিটিশ নাগরিক এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হুসেইন মোহাম্মদ এবং নাজমা মাক্সামেদ এই লক্ষ্যে গণ স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের নেতাদের বিচারে বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার আইনজীবীরা যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শরণাপন্ন হন, সে লক্ষ্যেই স্বাক্ষর অভিযান চলছে।

রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চললেও তা বন্ধে বিশ্ব মহল কোনো ধরনের উদ্যোগ কার্যত গ্রহণ না করায় তারা এই প্রচারাভিযান শুরু করেন। মিয়ানমার নেতাদের বিচারের আওতায় আনতে ওই পিটিশনে এরই মধ্যে ৪ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ডাউনিং স্ট্রিটে সেটি প্রকাশ করা হবে।

উদ্যোগটি সফল হলে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হওয়ার পেছনের কারণ তদন্তে মানবাধিকার আইনজীবীরা বাংলাদেশে যাবেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতার বর্ণনার সঙ্গে তারা জাতিসংঘের প্রতিবেদন মিলিয়ে দেখবেন।

এই প্রচারাভিযানের বেশ কয়েকটি আইনগত উদ্দেশ্যও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। যার মধ্যে মিয়ানমার যে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে তা প্রমাণ করার বিষয়টিও রয়েছে।

এছাড়া, ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের জন্য ক্ষেত্র তৈরিও এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য। যে আহ্বান জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান আগেই করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আয়োজকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক আইনজীবী সাইমো চাচেল ইন্ডিপেনডেন্ট’কে জানান, মিয়ানমারের ঘটনায় বৈধ প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি। যেখানে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে, সেখানে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়াইয়ের জন্য মিয়ানমার নেতাদের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করাটাও প্রয়োজন।

কঠিন কাজটাকে সম্ভব করার জন্য সব শ্রেণীর মানুষ অবদান রাখতে পারবেন বলেও জানান সাইমো। আর প্রচারকাজের উদ্যোক্তা হুসাইন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান তখনই শুরু হয় যখন কোনো নিন্দা আর উদ্যোগই মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান থেকে নিবৃত করা যাচ্ছিল না।’

হুসাইন বলেন, ‘এই দুনিয়া অত্যন্ত কঠিন কিন্তু এতটা নিষ্ঠুর নয়! এই প্রচারণা তাদের জন্য যারা নিরীহ নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন দেখে এর বিচার প্রত্যাশা করে। হত্যা, ধর্ষণ আর বাস্তচ্যূত মানুষদের উপর হওয়া অপরাধের সুবিচার চায়।’

রাখাইনে প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সু চি সরকার।

রাখাইনের এই সহিংস পরিস্থিতিতে কার্যকর কোনো ভূমিকা না রাখায় শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি’র বিরুদ্ধেও নিন্দার ঝড় বইছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও সু চি সরকারের দাবি, এরা বাঙালি। সু চি নিজেই বলেছেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এরা অবৈধ অধিবাসী।

এমন মানবতা বিরোধী অবস্থানের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন মহল সু চি’র নোবেল শান্তি পুরস্কার বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও গত সপ্তাহে কিছুটা সুর নামিয়ে সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ