আজ বাবরি মসজিদ রায় ঘোষণার পরই অবসর নেবেন বিচারপতি

বাবরি মসজিদ ভারতের উত্তর প্রদেশের, ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ছিল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বাবরি মসজিদ ধ্বংসমামলার রায় আজ বুধবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে ভারতের আদালত। লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে রায় ঘোষণা করবেন বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার যাদব রায়।

এদিকে, আজ রায় ঘোষণার পরই বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার যাদব রায় অবসর নেবেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। ২০১৯ সালেই অবসর নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এই মামলার রায়দানের জন্য তার অবসরের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

এদিকে, এ মামলায় অভিযুক্ত বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, কল্যাণ সিং, উমা ভারতীসহ ৩২ জন।

আগে আদালতের নির্দেশ ছিল আডবাণী, জোশী, কল্যাণ সিং, উমা ভারতীদের সশরীরে আদালতকক্ষে হাজির থাকতে হবে। কিন্তু বয়সের কথা ভেবে নব্বই পার হয়ে যাওয়া আডবাণী ও ৮৬ বছর বয়সী মুরলী মনোহর জোশী জানিয়েছেন, তারা আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। উমা ভারতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে এইমসে ভর্তি। কল্যাণ সিং-ও অসুস্থ। তারা কেউই আদালতে থাকবেন না।

তবে আডবাণী, জোশী, কল্যাণ সিংয়ের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা দেবেন। বাকিরা আদালতে হাজির থাকবেন।

বিশ্বাস করা হয়, এ বাবরি মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত ছিল সেটাই ছিল হিন্দু ধর্মের অবতার রামের জন্মস্থান। এই বিষয়টি নিয়ে আঠারো শতক থেকেই হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে, যা অযোধ্যা বিবাদ নামে পরিচিত। মসজিদের অভিলিখন থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮–২৯ (৯৩৫ হিজরি বর্ষে) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে কর সেবক দ্বারা এই মসজিদ আক্রমণ করা হয় এবং গুড়িয়ে দেওয়া হয়। যা পুরো দেশজুড়ে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ্ফোরণ ঘটায়।

ধারনা করা হয়,এই মসজিদটি রামকোট (“রামের দুর্গ”) হিলের উপর অবস্থিত ছিল। (যদিও তার কোন প্রমাণ নেই) হিন্দুদের মতে, মীর বাকী পূর্বে অবস্থিত রামমন্দির ধ্বংস করে তারপর মসজিদ নির্মাণ করেছে। আদৌ রামমন্দির ছিল কিনা তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ভিন্নমত আছে। ২০০৩ সালে ভারতের ভূমি জরিপ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা বাবরী মসজিদের নিচে একটি পুরাতন স্থাপনার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন।

১৯ শতকের শুরু থেকে এ বিতর্কের জের ধরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক কলহের ঘটনা ঘটে এবং পাল্টাপাল্টি আদালতে মামলা দায়ের চলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সাথে জোট বেধে গোপনে রামের একটি বিগ্রহ মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। হিন্দু-মুসলিম উভয়ই সে স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দেয়। যার ফলে পুরো ভারত জুড়েই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গা পুরো ভারতজুড়ে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।