কুর্দিবিরোধী অভিযানে উভয় সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের মধ্যেই কুর্দি মিত্রদের ত্যাগ করার অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার সাংবাদিকদের বলেছেন, পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, আমরা আমাদের কুর্দিশ অংশীদার বাহিনী ত্যাগ করছি না এবং মার্কিন সেনারা সিরিয়ার অন্যান্য অংশে তাদের সাথে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে।’

ইতোমধ্যেই উত্তরের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে তুরস্কের অভিযানে এক লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এ দিকে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের অবস্থান থেকে নিক্ষেপ করা গোলায় মার্কিন সেনারা আক্রান্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে। কুর্দিশ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানে মার্কিন সেনারাও ঝুঁকিতে রয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের মুখপাত্র নৌ ক্যাপ্টেন ব্রুক ডিওয়াল্ট বলেন, নিরাপত্তা মেকানিজম এলাকার বাইরের কয়েক শ’ মিটারের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে মার্কিন সেনাদের অবস্থানের বিষয়ে তুরস্কের বাহিনী জানে। তিনি বলেন, কোবান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, গোলাবর্ষণের পর মার্কিন বাহিনীর ছোট একটা সংখ্যাকে ওই ফাঁড়ি থেকে অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোবানে মার্কিন ঘাঁটির কাছ থেকে আসা হয়রানিমূলক গোলার জবাব দিচ্ছে তারা। মার্ক এসপার বলেন, ‘তুরস্কের এই অভিযানটিকে কেউই সমর্থন করেনি। তুর্কিদের এই অভিযানটি শুরু না করার জন্য আমরা সর্বস্তরে খুব সচেষ্টভাবে তৎপরতা চালিয়েছি।’

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, তুরস্কের অভিযানের ফলে সেখান থেকে লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আল আবিয়াদ থেকে পালিয়েছে। যারা এখন মৃত্যু ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ওসিএইচএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের বোমা হামলায় পানি স্টেশনের মতো অন্যান্য সেবামূলক বেসামরিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসাকেহ এলাকায় খাবার পানির সঙ্কটে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তুরস্ককে সেখানে সামরিক অভিযানের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। ওই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দিদের ওপর হামলা করতে তুরস্ককে সুযোগ দেয়া হয়েছে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটনকে সহায়তা করছে।

সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায় সিরিয়া সরকার। পরে ২০১৫ সাল থেকে ওই এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, ‘যে যাই বলুক না কেন, আমরা কোনো অবস্থাতে সামরিক অভিযান বন্ধ করব না।’

অন্য দিকে সিরিয়ার উত্তরের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে বহিঃআক্রমণ চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উত্তর আটলান্টিক দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার তুরস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ এই আহ্বান জানান।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এই বহিঃআক্রমণের ফলে সেখানে ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী’র উত্থান হতে পারে। ৭ অক্টোবর সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। পরে ৯ অক্টোবরর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ‘পিস স্প্রিং অপারেশন’ শুরু করে আঙ্কারা। অভিযানের উদ্দেশ্য উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের জন্য সেফ জোন তৈরি করা। তুরস্কে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী রয়েছে। এসব শরণার্থীকে সেফ জোনে পাঠাতে চায় তুরস্ক।
:আলজাজিরা

Scroll to Top