\’৩০ মিনিট\’ অক্সিজেনের বিল ৮৬ হাজার টাকা!

রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর স্বজন। সম্প্রতি এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হক (৬৭)। তার ছেলে অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দিনে মাত্র ৩০ মিনিট অক্সিজেন ব্যবহারের বিল দিতে হয়েছে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।

ডিউটি ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসকই তার বাবাকে দেখেনি হাসপাতালে। তবুও চিকিৎসকের কনসালটেন্ট ফি দিতে হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা।

মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. তৌহিদুল হক সোহেল গণমাধ্যমকে জানান, আমার বাবা চট্টগ্রামে থাকতেন। সেখানে তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পরেই ঢাকায় এনেছি। বাবার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গই ছিলো না। তবুও যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেকারণে তাকে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করছিলাম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবার খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার রুমে কোনো চিকিৎসক যায়নি। এক দিন শুধু একজন ডাক্তার দরজা থেকে হাত ঈশারা দিয়েছেন। তবুও চিকিৎসকের কনসালটেন্ট ফি দিতে হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া কোনো ক্লিনার বা অন্য কেউ যায়নি তার রুমে। তবুও রুমের সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা।

এই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বলেন, সবচেয়ে খারাপ লাগার বিষয় হলো আমার বাবার কোনো শ্বাসকষ্ট ছিল না। তাকে আমি নিজেই অক্সিমিটার কিনে দিয়েছিলাম। দুই দিন তার সামান্য অক্সিজেনের দরকার হয়েছে। মাত্র ১০/১৫ মিনিট করে দুই দিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট অক্সিজেন নিতে হয়েছে বাবাকে। তবু্ও সেই অক্সিজেনের বিল তারা করেছেন ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। আমি হাসপাতালে জিজ্ঞাসা করছিলাম প্রতি ঘণ্টা অক্সিজেনের বিল কত? তারা তখন আমাকে জানায় ঘণ্টা ৪০০ টাকা। যদি সেই হিসেবেও ধরি যে দুই দিন ২৪ ঘণ্টাই বাবার অক্সিজেন লেগেছে। তবুও তো এত বিল হবে না।

মোজাম্মেল হকের বিলে লেখা আছে, হাসপাতালে ৯ দিনে ২১৬ ঘণ্টার বিল অক্সিজেন বিল ৪০০ টাকা হিসাবে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। হাসপাতালের বিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪২০ টাকা। চিকিৎসকের ফি ৪৯ হাজার টাকা। ইনভেস্টিগেশন বিল ৮ হাজার ১৭০ টাকা এবং ওষুধের বিল ধরে দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৭৫২ টাকা।

আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের ম্যানেজার মো. নেওয়াজ বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অক্সিজেনের বিল প্রতি ঘণ্টায় কত টাকা এটাও আমি জানি না।

এই বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

পরে অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।

এর আগে, মো. হুমায়ুন ( ৪১) নামে ফকিরাপুলের এক করোনা রোগীর কাছ থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিল দাবি করে আনোয়ার খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এত টাকার বিল দেখে মাথায় হাত পড়ে সেই অসহায় রোগীর। পরে সেই বিলের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে শুধুমাত্র ২০ হাজার ৭০০ টাকা বিল পরিশোধ করে রিলিজ পান তিনি৷

একই ঘটনা ঘটেছিল সাইফুর রহমান নামের অপর এক করোনারোগীর সঙ্গেও। সেই রোগীর কাছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বিল দাবি করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

পরে রাতেই এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে ওই রোগী ছাড়া পেয়ে বাসায় গিয়েছিলেন। পরে দুঃখপ্রকাশ করে লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দেয় আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল।
:দৈনিক আমাদের সময়

Scroll to Top