দেশের অন্যতম সেরা ৫ টি দর্শনীয় স্থান

সুজলা সুফলা নদীমাতৃক এই সুন্দর বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র। অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিবছর ভিড় জমিয়ে থাকেন। প্রাচীন স্থাপনা, পাহাড়ে-আহারে, নদীতে নৌকা ভ্রমণ, সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটন স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশের সেরা ৫ টি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে জানাব। ভ্রমণের জন্য এই স্থান গুলো খুবই চমৎকার।

কক্সবাজারঃ

\"\"

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভও৷ ভ্রমণে তাই কক্সবাজার এখন আরো বেশি উপভোগ্য৷ এখানে শুধু দেশি পর্যটকরা যান না, বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ে।

এছাড়া এখানকার বিভিন্ন দ্বীপ যেমন মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ( স্থানীয় অনেকের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা), মাতাবাড়ি, বন,বৌদ্ধমন্দির রয়েছে। কক্সবাজার শহরের লাবনী ও সুগন্ধা সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে হিমছড়ি, ইনানী, শামলাপুর, হাজামপাড়া আর টেকনাফ। এর একেকটি সৈকত যেন বৈচিত্র্যের ভান্ডার৷ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামুতে আছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা৷ আর চকোরিয়ার ডুলাহাজরায় আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক৷

ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়৷

সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ

\"\"

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন৷ স্থানীয়ভাবে জায়গাটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত৷ টেকনাফ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান৷ প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকত জুড়ে সারিসারি নারিকেল গাছ, বেলাভূমিতে প্রবাল পাথর, দিগন্তজুড়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনমাতানো সৌন্দর্য৷ ছোট্ট এই দ্বীপটিতে বৈচিত্র্য ঠাসা৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পুর্ব থেকে পশ্চিম, সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের পসরা৷ যেমন, উত্তরের সৈকতে জোয়ারভাটায় জেলেদের মাছ ধরা, পশ্চিমের সৈকতে সারিসারি নারিকেল বাগান৷ পূর্ব আর দক্ষিণ পাশের সৈকতজুড়ে মৃত প্রবালের সঙ্গে নীলসমুদ্র৷ এত নীল পানির সমুদ্র বাংলাদেশের আর কোথাও নেই৷

সেন্টমার্টিনের আরেক আকর্ষণ ছেঁড়াদ্বীপ৷ মূল দ্বীপের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত৷ একসময় মূল দ্বীপ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে৷ তবে জোয়ারের সময় এখনো এর সংযোগস্থল ডুবে যায়৷

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু আছে বেশকিছু সমুদ্রগামী জাহাজ৷

রাঙামাটিঃ

\"\"

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা রাঙ্গামাটি৷ কাপ্তাই লেকের বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট এর জেলা শহর আর আশপাশে সর্বত্রই রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় স্থান। এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে। তবে বর্ষার সাজ একেবারেই অন্যরূপ। এখানকার জেলা শহরে আছে উপজাতীয় জাদুঘর৷ জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে এ জাদুঘরের জুড়ি নেই৷ এর কাছেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবনবিহার৷ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নানান আচার অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এখানে৷ রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দীপ জুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি৷

রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীরে খুব ব্যস্ত দুটি জায়গা রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার৷ দুটি বাজারেই মূলত আদিবাসীদের আনাগোনা বেশি৷ তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স৷ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু৷

রাঙ্গামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি হলো সাজেক৷ জায়গাটির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে৷ সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার৷ বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক৷ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান৷ সাজেকের পাহাড়চূড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে৷

বান্দরবানঃ

\"\"

সৃষ্টিকর্তা অপার সৌন্দর্যে সাজিয়েছেন বান্দরবানকে। তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান৷ এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা৷ পাহাড়, নদী, ঝর্ণা এবং সবুজ এসব কিছু মিলিয়ে অনেকের প্রিয় পার্বত্য এই জেলা। বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি৷ বোমাং রাজার উত্তরসূরীরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে৷ আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী৷

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় জাদির পাহাড়ে আছে স্বর্ণ মন্দির৷ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি৷ শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স৷ প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ৷

শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল৷ শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট৷ এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূর দূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়৷

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত৷ এখানে আছে একটি ঝরনা৷ শৈল প্রপাতের পাশেই স্থানীয় আদিবাসীদের ভ্রাম্যমাণ বাজারটি দেখার মতো৷ তাঁদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল পাওয়া যায় এ বাজারে৷ এখানে আরো আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের একটি গ্রামও৷

শৈলপ্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়৷ এ পথে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২শ\’ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য ছবির মতো৷

সুন্দরবনঃ

\"\"

প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশে৷ ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷ ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেঙ্গল টাইগারের বাস ছাড়াও এ বনে আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুঁইসাপ, ভোদর, ডলফিন, লোনাপানির কুমিরসহ আরো অনেক বন্যপ্রাণী৷ সুন্দরবনের প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, হেতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি৷

মংলার কাছাকাছি করমজল আর হারবাড়িয়া ছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো কটকা, কচিখালী, হিরণপয়েন্ট, দুবলার চর, কোকিলমনি, মান্দারবাড়িয়া, পুটনি দ্বীপ ইত্যাদি৷ এরমধ্যে কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া এবং পুটনি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য৷

সুন্দরবনে ভ্রমণে এখন অনেক পেশাদার ভ্রমণ সংস্থা এখন প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেঙ্গল ট্যুরস, গাইড ট্যুরস, সিলভার ওয়েভ ট্যুরস, পাগমার্ক ট্যুরস ইত্যদি৷