রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার বাসা থেকে বাবা-মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার

রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে বাবা-মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই পরিবারের বড় বোন মেহজাবিন ইসলাম মুনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে মুন পরিবারের সবাইকে কৌশলে বিষাক্ত কিছু পান করিয়ে হত্যা করেছেন।

আজ শনিবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, মেহজাবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে এই মৃত্যু সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে সকালে কদমতলীর একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুলের (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অচেতন অবস্থায় মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিহত মৌসুমী ইসলাম উচ্চবিত্তদের নারী সরবরাহ করতেন। তার মেয়ে মেহজাবিন মুন ছিলেন এক নেতার বেডপার্টনার। মা-মেয়ের মধ্যে দেহব্যবসা নিয়ে ঝামেলা হয়।
এর রেশ ধরে মুন পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, মুনের মা মৌসুমী সাবেক একজন বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামি। মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের এসব অপকর্মের বিষয়ে তিনি জানতেন।

এদিকে আটক মেহজাবিন ইসলামের খালা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, \”আমার ভাগ্নি মেহজাবীনের স্বামী শফিক একজন খুনি ও একাধিক মামলার আসামি। ৫ বছর আগে কেরানীগঞ্জে একজনকে হত্যা করেন। সে মামলা থেকে রেহাই পেতে টাকার জন্য ভাগ্নি মেহজাবিনের সঙ্গে তার স্বামী শফিকুল ইসলামের প্রায় ঝগড়া হতো। তাছাড়া শফিক তার শালি আমার আরেক ভাগ্নি জান্নাতুল ইসলামের সঙ্গে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করত। এ ঘটনা আমার নিহত বোন মৌসুমী জানতে পেরে জামাতা শফিককে বাধা দিতেন। এ নিয়ে আমার বোনের সঙ্গে শফিকের প্রায় ঝগড়া হতো। শফিকের সঙ্গে আমার বোন পেরে উঠতে না পেরে তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ইসলামকে (শফিকের শালিকে) কারাগারে দিয়ে দেন। শফিক তদবির করে ৫ মাস পর তাকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে এসে আবার তার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেন। এ নিয়ে আমার ভাগ্নি ও বোনের সঙ্গে শফিকের কলহ লেগেই থাকত। ৪ বছর আগে সফিক আমার বোনকে (তার শাশুড়ি) হত্যার উদ্দেশ্যে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। চিকিৎসা করতেও বাধা দেয়। দরজা-জানালা বন্ধ করে আমার বোন ও ভাগ্নিকে প্রায়ই মারধর করত। এ বিষয়ে কদমতলী থানায় অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল না পেয়ে কোর্টে মামলাও করা হয়েছে।\”

ঘাতকের চাচাতো বোন পরিচয় দেওয়া শিলা বলেন, \”গত দুদিন আগে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই তার ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করে। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।\”

পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় আটক মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের শিশুসন্তান তৃপ্তিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের শিশুসন্তান আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। তারা বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই। স্ত্রী মুনের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। মুনের সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে জানায় শফিকুল।

পুলিশ জানায়, কদমতলী মুরাদনগর এলাকায় মুনের বাবা মাসুদ রানা স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে বসবাস করতেন। অপর মেয়ে বিবাহিতা মুন বাগানবাড়িতে স্বামীর বাসায় বসবাস করতেন। তাদের একটি মেয়ে শিশুসন্তান রয়েছে।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন বলেন, মেহজাবিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।