সশস্ত্র জিহাদে ডাক পেলেই যেতে প্রস্তুত ছিলেন নাবিলা

জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষা দেওয়ার কথা। এর মধ্যেই পরিবার তার বিয়ে দিতে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নাবিলার সাফ কথা, জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সে সামনের সারিতে থাকবে। এমনকি শহীদি মৃত্যু হলেও সে পিছু হটবে না। ছেলেও যদি এমন মতাদর্শের হয় তাহলে বিয়ে হবে, অন্যথায় না। গত দুই বছর ধরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাবিলা জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে সিমকার্ড ও মেমোরিকার্ডসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয় বলে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান।

সিটিটিসির দাবি, এই প্রথম আনসার আল ইসলামের কোনো নারী সদস্যকে গ্রেফতার করা হল। এর আগে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নারী সদস্য গ্রেফতার হলেও তারা নাবিলার মতো ‘প্রশিক্ষিত’ ছিলেন না। রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখায় অর্থাৎ ‘জঙ্গিবাদের প্রচার প্রচারণার’ দায়িত্ব পালন করতেন নাবিলা। তবে সামরিক শাখার সঙ্গেও তার ‘যোগাযোগ’ ছিল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাবিলা জানায়, সে ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। এক সময় সে ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পায়। তখন সে ওই পেইজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও এবং আর্টিকেল সম্পর্কে ধারণা পায় এবং তাদের মতাদর্শ নিজের ভেতরে লালন করতে শুরু করে।

‘তিতুমীর মিডিয়ার পেজ অ্যাডমিনের সাথে তার যোগাযোগ হয়। পরে সেই অ্যাডমিন তাকে উগ্রবাদী জিহাদী কন্টেন্টসহ আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলোর লিংক দেয়।’ এভাবে ধীরে ধীরে ওই তরুণী আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যুক্ত হন। ফেসবুক ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি কাজটি করতেন বলে কাউন্টার টেরোরিজমকে জানিয়েছেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, সে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করত। টেলিগ্রামে তার চারটি অ্যাকাউন্ট এবং সেই টেলিগ্রাম একাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল সে চালাত। এসব চ্যানেলে সে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করত। তার সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছেন, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করেন।

‘জিহাদ কেন প্রয়োজন’, ‘কিতাবুল জিহাদ’, ‘একাকি শিকারি লোন উলফ’, ‘স্লিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরিয়তের শত্রু’, ‘আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’সহ বহু উগ্রবাদী বই বিভিন্ন সময়ে নাবিলার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থেকে প্রকাশ করা হত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, নাবিলা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল চ্যানেলেও যুক্ত ছিলেন। সেসব চ্যানেলে আইইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলার কৌশলগত বিষয় নিয়ে ‘ভিডিও ও ফাইল শেয়ার করতেন’ তিনি।

তার জঙ্গিবাদে জড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা কী ছিল জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, পরিবার চেষ্টা করেছিল তাকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেনি। পরিবারের অমতে তিনি এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। নাবিলার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে। আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।