বেতন থেকে কেটে নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা!

মহামারী করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে কর্মরত নন-এমপিও ১৯জন শিক্ষক আর ১১জন কর্মচারীর টাকা কেটে নেওয়ার এমন অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের টাকা বেতন থেকে কেটে নেওয়ায় হতবাক ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে স্থাপিত টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে দুই সিফটে চলমান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর এ বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭৮৫ জন আর শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে নন-এমপিও রয়েছেন ১৯ জন শিক্ষক আর ১১জন কর্মচারী।

বিদ্যালয়ে কর্মরত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন অনুদান। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ওই অনুদানে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত নন-এমপিও ১৯ জন শিক্ষক জনপ্রতি পেয়েছেন পাঁচ হাজার টাকার চেক আর ১১জন কর্মচারীরা পান আড়াই হাজার টাকার চেক। প্রাপ্ত অনুদানের পরিমান এক লাখ বাইশ হাজার পাঁচশ টাকা। চলতি বছরের ১২ জুলাই জনতা ব্যাংক আশেকপুর শাখা টাঙ্গাইল থেকে অনুদানের ওই চেক পান তারা। তবে বিদ্যালয়ের জুলাই মাসে পাওয়া জুনের বেতন থেকে সেই অনুদানের টাকা আবার কেটে নেওয়া হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়ায় হতবাক হয়েছেন তারা।

বেতন থেকে অনুদানের টাকা কেটে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ে নন-এমপিও হিসেবে কর্মরত বাংলা বিভাগের সহকারি শিক্ষক সুলতানা শামীমা নাসরিন, সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ একাধিক শিক্ষক।

তাদের অভিযোগ, গত ১৯ জুলাই বিদ্যালয় থেকে পাওয়া জুনের বেতন উত্তোলনের সময় তারা জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের পাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর অনুদান যদিও প্রণোদনা বা ঋণ ছিল না তবে এরপরও তা কেটে রাখা হয়েছে। বেতন থেকে ওই টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে পারেন বিদ্যালয় থেকে তাদের নিয়মিত বেতন দেয়া হয়, তাই তাদের প্রাপ্ত অনুদানের টাকাটা কেটে রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয়ে হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো.রুবেল মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে নন-এমপিও ১৯জন শিক্ষক আর ১১জন কর্মচারীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা বেতন থেকে কেটে রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, করোনাকালীন সময়ে বেতন পাচ্ছেন না এমন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী মানবিক এই অনুদান দিয়েছেন। আমাদের সকল নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন, এ কারণে বেতন থেকে তাদের ওই অনুদানের টাকা কেটে রাখা হয়েছে।

নিয়মিত বেতন পাওয়া স্বত্তেও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা কেন পাঠানো হয়েছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন কারণ না জানিয়ে বোর্ড থেকে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল বলেই তালিকাটি পাঠানো হয়। এছাড়াও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে রাখা অনুদানের টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।