সাতক্ষীরায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে মেডিক্যাল অক্সিজেন

মহামারি করোনার ভায়ল থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ভয়াল মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড প্রতিবেশী দেশ ভারত। প্রতিদিনই সেখানে অক্সিজেন সংকটে মরছে মানুষ। বাংলাদেশও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রহর গুনছে। কভিড-১৯ নামের ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মানুষের শ্বাসযন্ত্র ফুসফুস। একবার আক্রান্ত হলে বেড়ে যায় রোগীর শ্বাসকষ্ট। জীবন বাঁচাতে তাই জরুরি প্রয়োজন অক্সিজেন। করোনাকালে সাতক্ষীরায় অক্সিজেন মজুদের সর্বশেষ কী অবস্থা জানতে কথা হয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে।

সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘বর্তমানে ২০ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে। মেডিক্যালের আটতলা পর্যন্ত কভার করা যাবে। এখন বর্তমানে পাঁচতলা পর্যন্ত চালু আছে।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টে প্রতিমাসে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করে। মেডিক্যালে কনসেনট্রেটর মেশিন আছে ১৫ টা, আরো ২০টা কনসেনট্রেটর দ্রুতই বসানো হবে। এছাড়া অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ৩৮টা। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ৮২টা, ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের আবেদন করা হয়েছে। আইসিইউ আছে ৮টা। ভেন্টিলেটর আছে ৮টা। অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে করোনা সংক্রমণরোধে সকলকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে’।

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বৃদ্ধি পেয়েছে মৃত্যুর হারও। গত মার্চ মাসে করোনা রোগী ভর্তি হয় ১০৩ জন। এর মধ্যে করোনা সন্দেহে ভর্তি হয় ৯৪ জন, মৃত্যুবরণ করে ১২ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ৯ জন, মৃত্যুবরণ করে একজন। এপ্রিল মাসে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে ১৮৪ জন। এর মধ্যে করোনা সন্দেহে ভর্তি হয় ১৫৫ জন, মৃত্যুবরণ করে ১৭ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ২৯ জন, মৃত্যুবরণ করে ৯ জন। বর্তমানে ৮৮টি করোনা শয্যার মধ্যে রোগী আছে ৩৭ জন।

করোনা নিয়ে আলাপকালে চিকিৎসকরা জানান, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসের ক্ষুদ্রতম অংশ বায়ু থলির (অ্যালভিওলি) মাধ্যমে মানবদেহ অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগ করে থাকে। করোনা সংক্রমণে ফুসফুসের বায়ুথলিতে এক প্রকার আস্তরণ পড়ে। এর ফলে অক্সিজেন গ্রহণ ও কর্বন ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগে বাধাগ্রস্ত হয়। প্রয়োজন হয় কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেনের।

ফলে পৃথিবীব্যাপী মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাবে শত শত রোগী মারা গেছে। বর্তমানে দেশে অক্সিজেনের চাহিদা আছে ১৫৫ টন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কিছুটা কম। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবেলায় মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ অব্যহত রাখতে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. শফায়াত জানান, ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট আগামী এক মাসের মধ্যে চালু হবে। সদর হাসপাতালে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন আছে ৪টা, ৩টা নষ্ট। একটা শিশু বিভাগে ব্যবহার করা হয়। একটা মেশিন দু্ই শিশুর অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।

আইসিইউ আছে একটা কিন্তু জনবলের অভাব। ভেন্টিলেটর আছে একটা কিন্তু তা নষ্ট। উপজেলা পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০টা অক্সিজেন সরবরাহ অব্যহত আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের সমস্যা নেই। কিন্তু সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে অচিরেই অক্সিজেনের সমস্যা তৈরি হবে। আমরা সকলেই সরকারি নির্দেশনা মেনে মাস্ক ব্যবহার করি, হাট-বাজার এড়িয়ে চলি, নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখি তাহলে ৮২ থেকে ৮৫ শতাংশ করোনা সংক্রমণ রোধ করতে পারি। আমাদের সকলকে করোনা সংক্রমণরোধে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।