কেমন উপাচার্য চান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?

কুষ্টিয়াতে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটিই দেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪২ বছরে দায়িত্ব পালন করেছেন ১২ জন উপাচার্য।

গত ২০ আগস্ট শেষ হয়েছে ১২তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর মেয়াদ। একইসঙ্গে ২১ আগস্ট থেকে শূন্য কোষাধ্যক্ষ পদটিও। কে হচ্ছেন আগামীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার, তা নিয়ে ইবি পরিবারের সবার মনে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

নিজেদের অভিভাবক হিসেবে কেমন উপাচার্য চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? মতামত জানতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের ছয় বিভাগের ছয় জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতামতে উঠে এসেছে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। চলুন জেনে নেই তাদের মতামত।

কলা অনুষদ ভিত্তিক ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা রোজা বলেন, ‘এমন একজন উপাচার্যকে চাই, যিনি একইসঙ্গে বিজ্ঞান মনস্ক এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্য তথা নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানী হবেন। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার অবাধ ক্ষেত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে সব রকম প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাবেন। একজন উপাচার্যকে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অসুবিধা নিজেরও অসুবিধা বলে গণ্য হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধুর সম্পর্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবেন। ’

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আজাদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর পক্ষে বা বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা না করে যিনি দলমত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়রে সার্বিক উন্নতিকল্পে কাজ করবেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির মূল্যায়ন, আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসন, সেশনজট মুক্ত করতে অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করবেন এমন সাহসী নাবিকের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব আসুক এটিই কাম্য। ’

আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে এমন উপাচার্য দেখতে চাই, যিনি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, গবেষণার জন্য সবার সহাবস্থান নিশ্চিত, আবাসন বৃদ্ধিসহ সব হলেই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সিট এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যেখানে কাউকে নিজের মত প্রকাশের জন্য হয়রানির শিকার হতে হবে না। আমরা দেখেছি, আগে ইবিতে অনেক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে অনেক প্রতিবাদও হয়েছে। কিন্তু অনেক ঘটনায় ভিকটিম সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই আমার কামনা থাকবে, এমন একজন উপাচার্য আসুক, যিনি নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস উপহার দিতে পারবেন। ’

বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এইচ এম আরাফাত বলেন, ‘আসন্ন উপাচার্যের কাছে আমার প্রথম চাওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ছাত্র-শিক্ষক বিভাজন ও রাজনৈতিক নোংরামি দূর করার মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। এছাড়া বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে বিদ্যমান ল্যাব সুবিধার উন্নতি ও বিষয়ভিত্তিক গবেষণার নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেবেন। সেশনজটসহ বিভাগগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে তদারকি বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। ’

ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ফলিত রসায়ন ও ক্যামিকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অমিত সরকার বলেন, ‘একজন উপাচার্যের সৎ, জ্ঞানী, নিরপেক্ষ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, শিক্ষার্থীবান্ধব গুণ থাকা আবশ্যক। যার মাধ্যম দিয়েই হতে পারে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন, সেশনজট মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। যিনি উন্নয়ন বলতে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয় বরং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবেন। যিনি অনুগতদের তোষামোদের বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মনোনিবেশ করবেন। ’

ধর্মতত্ত্ব অনুষদের দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আতিকুর রহমান সিরাজী বলেন, ‘এমন একজন অভিভাবক প্রয়োজন যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যকে ঠিক রেখে কাজ করবেন। যিনি দেশের মধ্যে ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠ যেন শুধু বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিকভাবে শ্রেষ্ঠ ইসলামিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাবেন। একটি দুর্নীতিমুক্ত এবং শিক্ষার্থীবন্ধব প্রশাসন চাই। ’
:বাংলানিউজ