রাজবাড়ীতে পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে \’এ\’ পেয়েছে হাবিব

নেই দুই হাত। শুধুমাত্র পা দিয়ে লিখে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে জিপিএ- ৪.৬৩ পেয়েছে হাবিবুর রহমান হাবিব। হাবিব রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার হিমায়েতখালি গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে।

জানা গেছে, নিজেরদের সামান্য জমি চাষাবাদ ও অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে চলে তাদের সংসার। চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় হাবিব। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয় বড় দুই বোনের এবং ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। জন্ম থেকেই হাবিবের দুই হাত নেই। ছোট বেলায় বাবা-মা, চাচা ও পরিবারের অন্যান্যদের অনুপ্রেরনায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস রপ্ত করে হাবিব।

এরপর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের প্রবেশ করে। শিক্ষা জীবনের প্রথম স্তরেই সে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে পিএসসিতে ৪.৬৭ পেয়ে পাশ করেন। এরপর শুরু হয় মাধ্যমকি শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় স্তর। বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরের পাংশার উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা। সেখান থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পেয়ে কৃতিত্তের সাথে পাশ করে। পরবর্তী আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে একই মাদরাসা থেকে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় নিয়ে পায় জিপিএ- ৪.৬৩।

হাবিবুর রহমান জানায়, দাখিল পরীক্ষায় যে রেজাল্ট করেছেন, তাতে সে খুশি না। দারিদ্রতা তার লেখাপড়ার উপর প্রভাবে ফেলেছে। তারপরও সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পড়ালেখায় যে খরচ তাতে কি হবে বলতে পারছে না। তবে সে বড় আলেম হতে চায়। পড়ালেখা করতে ছোট বেলা থেকে বাবা-মা, বোন, চাচা, সহপাঠি ও শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়েছেন। পরীক্ষার সময় পা দিয়ে লিখতে একটু সমস্যা হতো। সে সময় সংসারের দারিদ্রতা ও লেখাপড়া করে বড় কিছু হবে ভেবে পরীক্ষা দিতেন।

কালুখালীর বাসিন্দা ও বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, তিনি আগামী দুই বছর হাবিবের (আলিম) পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহন করবেন। মেধাবী ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সব সময় থাকার চেষ্টা করেন। হাবিবের দুই হাত না থাকার পরেও পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করেছে। আগামী দুই বছর আলিম পড়াশুনার জন্য ওর যেন কোন সমস্যা না হয়, সে জন্য যাবতীয় লেখা পড়ার খরচ তিনি দেবেন।

পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহমেদ বলেন, এ বছর তার মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ। এরমধ্যে হাবিব পা দিয়ে লিখে ভাল রেজাল্ট করেছে। অতীতে মাদরাসা থেকে ওকে সহযোগিতা করা হয়েছে এবং ভবিষতেও করা হবে।

Scroll to Top