‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়

২০ বছর বয়সী তরুণী জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। গত শুক্রবার রাতে তাকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নির্বাচিত করা হয়। আগামী ১৮ নভেম্বর চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠেয় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তবে এই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগে উঠেছে। যা নিয়ে গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।

গত শুক্রবার রাতে জমকালো পরিসরে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী হলে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালেতে সেরা তিন বিজয়ী বাছাই করা হয়। পরে উপস্থাপক আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল, প্রথম রানারআপ জেসিয়া ইসলাম ও দ্বিতীয় রানারআপ জান্নাতুল সুমাইয়া। অভিযোগ উঠেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়া জান্নাতুল নাঈম বিচারদের পছন্দের তালিকায় সেরা তিনজনের মধ্যেও ছিলেন না। অথচ বিচারকদের রায় পাল্টে উপস্থাপক শিনা চৌহান ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হিসেবে জান্নাতুল নাঈমের নাম ঘোষণা করেন। যা দেখে ক্ষুব্ধ বিচারকদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ অনুষ্ঠান ছেড়ে উঠে চলে যান। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে শিনা চৌহান বলেছেন, আমার কাছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে নামের যে লিস্ট দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটাই প্রকাশ করেছি।

পরে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই/তিনজন বিচারক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, ওই দিন রাতে যেটা করা হয়েছে সেটা খুব অন্যায় হয়েছে। বিচারকদের রায়ে যে প্রথম হয়েছে, তাকে প্রথম ঘোষণা করা হয়নি। তাছাড়া যাকে প্রথম করা হয়েছে, সে বিচারকদের রায়ে সেরা তিনজনের মধ্যেই ছিলেন না। বিচারকরা সবাই একবাক্যে জেসিকা ইসলামকে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত করেছিল বলেও জানান তারা। অথচ রায় পাল্টে পেছনের একজনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো।


জান্নাতুল নাঈমকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র মুকুট পরিয়ে দেন বিবি রাসেল।

বিচারকদের এমন মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হতেই ফাঁস হয়ে যায় ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নির্বাচন করা নিয়ে আয়োজকদের কারসাজি। এরপরই ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা শুরু করেন নেটিজেনরা। যা এখনও চলমান।

বিষয়টা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল-অভিনেত্রী ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ মাকসুদা আক্তার প্রিয়তিও। তিনি তার ফেসবুকে লেখা এক স্ট্যাটাসের শেষে বলেছেন, আমি অবশ্যই বলবো, আয়োজকরা অনেক বড় ভুল করেছে। যদি কেউ আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজকদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তারা নিজেদের লাইসেন্স হারাবে যেটি দেশের জন্য লজ্জা বয়ে নিয়ে আসবে। আর আমরাও এটা আশা করি না।

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধি পাঠাতে ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাছাই প্রক্রিয়ার আয়োজন করেছিল অন্তর শো বিজ ও অমিকন এন্টারটেইনমেন্ট। আর বিচারক প্যানেলে ছিলেন জুয়েল আইচ, শম্পা রেজা, বিবি রাসেল, চঞ্চল মাহমুদ, রুবাবা দৌলা ও সোনিয়া বশির কবির। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শিনা চৌহান।

বিচারকদের রায় পাল্টে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর শো বিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী একটি অনলাইন গণমাধ্যমে বলেন, “এ বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আয়োজক হিসেবে আমিই তো রায় দিব। আমিই পয়সা দিয়ে বিচারক নিয়োগ করেছি। ”

আয়োজক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার আগ্রহী নাম নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি ধাপে বাছাই করা হয় সেরা ১০ জনকে। সেই ১০ জন হলেন রুকাইয়া জাহান, জান্নাতুল নাঈম, জারা মিতু, সাদিয়া ইমান, তৌহিদা তাসনিম, মিফতাহুল জান্নাত, সঞ্চিতা দত্ত, ফারহানা জামান, জান্নাতুল সুমাইয়া ও জেসিকা ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ০২ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/নীল