নেটফ্লিক্সে ২০২০ সালের সেরা এক ডজন মুভি

২০২০ সালটি সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে মন্দ যাচ্ছে না। যদিও বছর শেষ হতে এখনো অনেক বাকি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মুভি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর সিনেমার প্লাটফর্ম হিসেবে নেটফ্লিক্সের কথা না বললেই নয়। এর ভক্ত অসংখ্যা। বাংলাদেশেও নেটফ্লিক্সের দর্শক অনেক বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মুভির সমাবেশ এখানে অনবদ্য। সপ্তাহ না গড়াতেই বেশ কয়েকটি নতুন মুভির দেখা মেলে এখানে। চলতি বছরে অনেকগুলো সিনেমা চলে এসেছে। আরো আসছে।

এসব মুভির মধ্যে হিটগুলোর তালিকা করা যেতেই পারে। এর মধ্যে যুগান্তকারী বা গ্রেট মুভি বলতে যা বোঝায় তা রয়েছে এমনটা হয়তো বলা যাবে না। তবে তুমুল জনপ্রিয় কিছু মুভির কথা নির্দ্বিধায় তুলে আনা যায়। নেটফ্লিক্সে যে মুভিগুলো এসেছে, তার মধ্যে সেরা ১২টির কথা জেনে নেয়া যাক। এর মধ্যে রোমান্টিক, অ্যাকশন এবং অন্যান্য ঘরানার মুভি রয়েছে।

এখানে সেরা তালিকা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

১. ডা ফাইভ ব্লাডস
অস্কারজয়ী ছবি নির্মাতা স্পাইক লি এর আরেকটি ব্লকব্লাস্টার এটি। এই মুভি আপনাকে মারাত্মকভাবে দোলা দেবে। মুহূর্তে মুহূর্তে আপনি অনুপ্রাণিত হবেন আবার ভেঙেচুরে যাবেন। ভিয়েতনামে ফিরে আসেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের কালো চামড়ার চার বীর। উদ্দেশ্য- তাদের নিহত স্কোয়াড লিডারের দেহটাকে খুঁজে বের করা এবং তাদের ফেলে যাওয়া কিছু স্বর্ণ উদ্ধার করা। আমেরিকা এবং ভিয়েতনামের মধ্যকার জাতিগত বিদ্বেষের গভীরে নিয়ে যাবে এই সিনেমা। আবার আমেরিকার সাদা ও কালো চামড়ার সেনাদের চিত্রও উঠে এসেছে যারা নিজের দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তারা বাড়ি ফেরার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাদের জন্য আরো যুদ্ধ অপেক্ষায় থাকলে তার জন্যও ফিরেছেন। এটা চলতি বছরের এ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সেরা মুভি তা নায়, বোদ্ধারা আশা করছেন, বছরের বাকি সময়ও এটাই সেরা হয়েই থাকবে।

২. ইউরোভিশন সং কনটেস্ট: দ্য স্টোরি অব ফায়ার সাগা
উইল ফেরেলের আরেকটি বোকা ধাঁচের কমেডি ছবি বলেই মনে করেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু খুব দ্রুতই এটা আশাবাদ, ভালোবাসা এবং গৌরবগাথার এক অনবদ্য আবেগঘন ও চিন্তাপূর্ণ মুভি হিসেবে ধরা দেবে। কমেডির মিশেল রয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি কৌতুকপূর্ণ মুভি বলতে পারবেন না। এতে গভীর আবেগ মিশে রয়েছে।

৩. এক্সট্র্যাকশন
এ মুভিতে দুটো বিষয় একযোগে এগিয়ে গেছে। এক. আর দুটোই বেশ মর্মস্পর্শী। এই সিনেমা ক্ষমতা দখলে রাখার নির্মম চিত্র। দুই. মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন মানুষ কিভাবে মানবতার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন এই গল্পটাই দেখতে পারবেন দর্শক। এখানে চরিত্রের দৈহিক কলাকৌশলের সাথে মনের দিকটাও দেখানো হয়েছে। এখানে একজন ভাড়াটে যোদ্ধাকে দেখানো হয়েছে। তার স্বাভাবিক সামর্থ বেশ কিছু সময় আগেই নষ্ট হয়েছে। তবে একটি অ্যাসাইনমেন্ট পান তিনি। এক অপহৃত এক শিশুকে উদ্ধারের কাজ। তার এই অ্যাসাইনমেন্ট যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখন নিজের জীবন বাঁচাতেই লড়তে হয় তাকে।

৪. দ্য ওল্ড গার্ড
এটি অ্যাকশন মুভি। তবে মানবতার প্রতি কয়েক অমর বীরদের তৎপরতা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। এই মুভির অ্যাকশন অসাধারণ। দর্শকদের কাছে মুভির চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে সময় নিয়েছেন পরিচালক প্রিন্স-বিথেউড। তবে এই দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দর্শককে উদ্বেলিত করবে। এটি এমন এক অ্যাকশন মুভি যেখানে মস্তিষ্ক এবং হৃদয় একযোগে কাজ করেছে।

৫. ক্রিপ ক্যাম্প
নেটফ্লিক্সে কিছু অসাধারণ ডকুমেন্টরি রয়েছে। এ বছরের প্রথম দিকে এমনই এক ডকুমেন্টরি অস্কার মনোনয়ন পায়। একই বছর একই তালিকায় স্থান পেয়েছে ক্রিপ ক্যাম্প। ধীর প্রক্রিয়ায় অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়ে ওঠার গল্প এখানে ফুটে উঠেছে। ক্যাম্প জেনেড নামের প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীদের একটি ক্যাম্পের ১৯৭১ সালের ফুটেজ তুলে আনা হয়েছে। এই শিবিরের অনেক সদস্য তাদের অধিকার নিয়ে তৎপর ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনার কাজটা কতটা হৃদয়বিদারক ও অকল্পনীয় হতে পারে তার উদাহরণ এই ডকুমেন্টরি।

৬. দ্য লাভবার্ডস
দীর্ঘদিনের সংসার তাদের। তবে গতানুগতিক জীবন। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কে ভাঙনের মুখে পড়েছে। এরইমধ্যে নৃশংস ঘটনা ঘটে যায়। আকস্মিক ঘটনা দর্শকদের নাড়া দেবে। তাদের পুলিশের কাছে যেতে হবে। ঘটনা পুরোপুরি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়। অপরাধ জগতের চিত্র উঠে আসবে পর্দায়। আর এর পর থেকে তাদের হোঁচট খাওয়া জীবনের মধ্য দিতে কাহিনি এগোতে থাকে।

৭. দ্য প্লাটফর্ম
এ বছর নেটফ্লিক্সের সেরা মুভির একটি বলা যায়। স্প্যানিশ জনরার মুভিটির পরিচালক গাল্ডার গ্যাজটেলা-উরুতিয়া। উঠে এসেছে টাওয়ারের মতো দেখতে একটা জেলের অভ্যন্তরের অরাজক অবস্থার চিত্র। প্রতিদিন সকালে টেবিল বন্দিদের জন্যে প্রস্তুতকৃত খাবারে পূর্ণ থাকে। তবে সবাই খাওয়ার সুযোগ পায় না। খাবারপূর্ণ টেনে নেয়া গাড়িটা লেভেল এক থেকে দ্বিতীয় লেভেলে যাওয়ার মধ্যে দুই বন্ধু যতটা পারেন খাওযার সুযোগ পান। সময় মেলে কয়েক মিনিট। এই গাড়ি যখন ৬০ বা ৭০ লেভেলে যায়, তখন খাওয়ার জন্য উচ্ছিষ্টই থাকে। অর্থাৎ, লেভেল যত নিচের দিকে, সেখানকার মানুষের ক্ষুধা তত বেশি থাকে। এখানে সব লেভেলের বন্দিদের অবস্থান বদলায় ৩০ দিন পর পর। কাজেই এখানকার বন্দিদের বেঁচে থাকার ছবি বদলায় সময়ের সাথে। এই বর্বর পদ্ধতির বদলাতে এবং খাবারের সুষম বণ্টন নিশ্চিতকরবে ওই খাবারের গাড়ির ইনচার্জ বার্তা দিতে হবে। আর এসব কাজ অবশ্যই বন্দিদশায় অবাধ্যতা বলে গণ্য হয়। সবমিলিয়ে এক ক্লাসিক যুদ্ধাবস্থা দেখতে পারবে দর্শকরা।

৮. সার্কাস অব বুকস
ম্যাসন্স দম্পতিকে দেখে যেকোনো দর্শক তাদের ভালোবেসে ফেলবেন। এই বয়স্ক দম্পতির বিয়ে কয়েক যুগ পেরিয়ে গেছে। তারা তিন সন্তানের জনক-জননী। এই ছবিতে তাদের দুজনকে খুব আন্তরিক এবং বন্ধুসুলভ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ছবির নামটা মূলত তাদের লস অ্যাঞ্জেলসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে করা। ওটা সমকামীদের পর্ন শপ। এটা পরিচালনা করে তাদের কন্যা র‍্যাচেল ম্যাসন। মুভিতে দেখানো হয়েছে তাদের সার্কাস অব বুকস কিভাবে যুগ যুগ ধরে সমকামী সমাজের জন্যে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। তাদের এই পথচলায় দেখা যাবে কিভাবে সমকামীরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এবং কিভাবে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করেছেন অন্যদের কাছে। একটা পরিবারের প্রেম, আনন্দ, হতাশা এবং হিংস্রতার চিরাচরিত চিত্র এই ছবিতে স্পষ্ট হয়েছে।

৯. মিস আমেরিকানা
অনেকেই ভেবেছিলেন, ধুন্ধুমার জনপ্রিয় গায়িকা ও গীতিকার টেইলর সুইফটের চেনাজানা জীবনটাই দেখা যাবে। কিন্তু সিনেমাটা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গভীরে চলে গেছে। ছবির প্রথমার্ধে সুইফটের ক্যারিয়ার এগিয়ে যাওয়ার ঘটনা সফলভাবেই দেখানো হয়েছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ছবি ভিন্নমাত্রায় চলে গেছে। সেখানে উঠে এসেছে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তা বুঝতে সুইফটের যে সংগ্রাম তা দর্শককে নতুন স্বাদ দেবে। প্রথমবারের মতো ভক্তদের সামনে তার রাজনৈতিক অবস্থানও উত্তেজনা তুলবে। এটা আসলে এক নারীবাদী তরুণীর সংগ্রামী জীবনের গল্প।

১০. টু অল দ্য বয়েজ: পি.এস. আই স্টিল লাভ ইউ
২০১৮ সালের নেটফ্লিক্সের অরিজিনাল মুভি। এটা দর্শকের মাঝে ঝড় তুলেছিল। এর সিক্যুয়ার প্রথমটির মতো প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এটা হাইস্কুলে পড়ুয়াদের রোমান্টিক কমেডি ধাঁচের ছবি। এর প্রধান চরিত্রের আবেগময়তা দর্শককে ছুঁয়ে যায়।

১১. বিকামিং
এখানে তুলে আনা হয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামাকে। নাদিয়া হ্যালগ্রিনের এই ডকুমেন্টরি আপনার আশানুরূপ গভীরে হয়তো নিয়ে যাবে না। কিন্তু স্বামীর সাথে মিশেল যে সৎ ও জলের মতো পরিষ্কার জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন তা উঠে এসেছে। সন্তানদের বড় করতে নিজের ক্যারিয়ারের পথ থেকে সরে আসা এবং আমেরিকার ফার্স্টলেডি হয়ে ওঠার গল্পে মিশে যাবে দর্শক। এই ডকুমেন্টরি দেখে আপনি কাঁদবেন, মিশেলের জীবনের গল্প যখন চোখের সামনে উঠে আসবে। হোয়াইট হাউজের চ্যালেঞ্জিং সমগুলোতে মিশেলের মনের শক্তি, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং হিউমার আপনাকে উদ্বেলিত করবে।

১২. দ্য হাফ অফ ইট
এই মুভিটিকে নেটফ্লিক্সের তুমুল হিট ‘টু অল দ্য বয়েজ আই হ্যাভ লাভড বিফোর’ মুভির সাথে তুলনা করা হয়েছে। দুটোতেই এশিয়ান আমেরিকান নারী চরিত্র প্রধান হয়েছে। দুটোতেই নারীদের মায়ের মৃত্যুর পর ‘কুল’ বাবার সঙ্গে জীবনযাপনের চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে এই ছবিতে একটা অনবদ্য প্রেমকাহিনি ছাপিয়ে গীতিকাব্যময়তা, হৃদয়বিদারক ঘটনা অনেক বেশি চিন্তার খোরাক দেবে। এটি পরিচালনা করেছেন অ্যালিস উ। তার এই হৃদয়স্পর্শী, জাঁকজমকপূর্ণ চিত্রায়ণ দর্শকের হৃদয় হরন করবে। কাহিনিতে ফুটে উঠেছে তিন টিনএজারের গল্প। তারা নিজেদের পরিচয় জানতে চায় এবং প্রথম প্রেমের বিষয়ে তারা পাগলপ্রায়। কিন্তু সবকিছু এলোমেলো হতে থাকে। এই ত্রিভুজ প্রেমের গল্পটা কখনোই দর্শকের কাছে সস্তাদরের মনে হবে না। আবার বাড়াবাড়িও নেই।
সূত্র: কলিডার