বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী মিতা হকের মৃত্যুতে তারকাদের শোকবার্তা

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও শুদ্ধ সংগীত চর্চার অন্যতম পুরোধা মিতা হক আর নেই। তিনি আজ ভোর ৬টা ২০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তারকারা এরইমধ্যে শোক প্রকাশ করছেন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু লিখেছেন, “আহা! অমন পরিশীলিত সুরেলা কণ্ঠের দেখা মেলা ভার। আর মিলবে কিনা জানি না। জীবন ও শিল্পের এমন শুদ্ধতম মিলন কালে ভদ্রে ঘটে। আনন্দের মাঝেই জীবন উথলিয়া ওঠে একথা মিতাকে দেখলেই মনে হতো। দুঃখকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জীবনের আনন্দে শিশুর মত করতালি দিতো। এইতো মাত্র সাতদিন আগে হাসপাতাল থেকে ফোনে চিৎকার করে বলে- বাচ্চুভাই, আমার তো এখানে ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না। আমারে বাসায় নিয়ে যায় না কেন! তার দু’তিনদিন পর কন্যা জয়ীতা ও সন্তানসম শাহীন ওদের করোনামুক্ত মাকে কেরাণীগঞ্জের বাসায় নিয়ে যায়। কিন্তু পরশু হঠৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারো হাসপাতাল। আর আজ প্রত্যুষে আমার কন্যা এশা ও পুত্রবৎ সাকি হাসপাতাল থেকে ফিরে জানালো ‘মিতামা’ মারা গেছে।
আমি নির্বাক। নিস্তব্ধতায় নিমজ্জিত হই। ভাবি মিতার মত জীবনকে ভালেবাসতে আমি কাউকে দেখিনি। এমনভাবে কাউকে জীবন উদযাপন করতে দেখিনি। শত কষ্ট-দুঃখের মাঝে কলকলিয়ে এভাবে হাসতেও দেখিনি কাউকে… চোখের জলে চৈত্রের ভোরের আকাশটাকে ধূসর দেখতে থাকি। ভাবি ঐ ধূসরে মিলিয়ে গেলে মানুষ আর কখনো ফিরে আসে না…
‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী… আমি অবাক হয়ে শুনি কেবল শুনি…’ বিদায় প্রিয় মিতা হক।”

সংগীতশিল্পী তপন মাহমুদ লিখেছেন, “শোকস্তব্ধ হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, সবার প্রাণের মানুষ, গানের মানুষ, আমার অনেক স্নেহের ছোট বোন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিল্পী মিতা হক আজ সকাল ৬টা ২০ মিনিটে অমৃতলোকে চলে গিয়েছেন। তার মৃত্যুতে আমি গভীর বেদনায় হতবিহ্বল, স্তম্ভিত। রবীন্দ্রসংগীতের পরিশীলিত ধারার এই শিল্পীর হঠাৎ প্রস্থানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা সহসা পূরণ হওয়ার নয়। আমি তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।”

রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অণিমা রায় লিখেন, “মিতা আপা। গুরু আমার। আমি তো কাঙ্গাল হয়ে গেলাম।”

সংগীতশিল্পী নবনীতা চৌধুরী লিখেছেন, “আমার ‘চিরবন্ধু, চিরনির্ভব’ মিতা হক আর নাই। ‘চিরপ্রীতি সুধানির্ঝর তুমি হে হৃদয়েশ’। কীভাবে বিদায় বলি তাকে! আমি শোকগ্রস্ত। গভীর শোক আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সে চলে গেল, বলে গেল না.. সে কোথায় গেল ফিরে এল না। সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল.. তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে।”

সংগীতশিল্পী আশিকুজ্জামান টুলু লিখেছেন, “মিতা হক চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। বিশ্বাস করা সম্ভব না।”

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, “উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক। আমাদের প্রাণের মানুষ, মিতা আপা। চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। আর কোনোদিন দেখতে পাবো না। শুনতে পাবো না আপনার গান। গভীর শ্রদ্ধা।”

অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর লেখেন, “আমার চোখে পুরো বিশ্বের বুকে যেই শিল্পীর গান এবং ব্যক্তিত্ব সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়, যার গান শুনে আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় সেই বরেণ্য সংগীতশিল্পী, শিক্ষক মিতা হক একটু আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আপা আপনি ভালো থাকবেন। আপনি সবসময় আমার প্রিয় শিল্পী ছিলেন আর আজীবন থাকবেন। দেখা হবে হয়তো অন্য কোনো দেশে, অন্য কোনো ভাবে। ঈশ্বর আপনাকে ভালো রাখুক। ‘আমি তোমাকে অসংখ্য ভাবে ভালোবেসেছি, অসংখ্যবার ভালোবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালোবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।”