আজ নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী

নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের আজ নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তার মরদেহ। ২৪ জুলাই তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়।

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনটি উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে প্রতিবছরই নানা আয়োজন হয়ে থাকে। এ বছর করোনা মহামারীর জন্য কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। সকালে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে বাবার কবর জিয়ারত করবেন বলে জানা গেছে। দিনটি উপলক্ষে সকাল থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকায় তেমন কোনো আয়োজন নেই বলে জানা গেছে। তবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার লেখা নাটক ও চলচ্চিত্র প্রচার করার পাশাপাশি তাকে নিয়ে আয়োজন করবে নানা অনুষ্ঠান। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এর পর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।