‘রাজ্জাক ছিলেন পাড়ার মেয়েদের হিরো’

রাজ্জাক ছিল আমাদের পাড়ার চকোলেট বয়- চোখের পানি ফেলে মঙ্গলবার এমনটাই বললেন নায়করাজ রাজ্জাকের বাল্যবন্ধু টি দাস ওরফে হিটলার।

হৃদরোগে আক্রান্ত রাজ্জাককে সোমবার বিকেলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। পরপারে পাড়ি জমানোর একদিন পর বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হিটলার বলেন, আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ছোটবেলা থেকে ওর উদ্যোগেই আমরা নাটক করতাম।

তিনি বলেন, আমরা একটা নাটকের ক্লাব বানিয়েছিলাম নব ঝংকার নাট্য সমিতি। পাড়ার মধ্যে প্যান্ডেল খাটিয়ে টিকিট কেটে আমরা নাটক করতাম। আমরা ৬ বন্ধু ছিলাম খুব অন্তরঙ্গ। লালজি, রণেন, পিলু আর প্রদীপ। আমরা ‘বিদ্রোহী’ নাটক করেছিলাম। পরে ‘দুই মহল’ নামে একটি নাটক নিয়ে আমরা কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে শো করেছি।

হিটলার বলেন, সব নাটকের প্যান্ডেল থেকে সব খরচ ওই (রাজ্জাক) করত। আর নাটকের পর যথারীতি পাওনাদাররা ওর বাড়িতে গিয়ে হামলা করত। একবার হিরো হবে বলে ও ১৯৫৬ সালে পালিয়ে গেল মুম্বাইয়ে; আবার ফিরেও এলো। বাড়ির লোক তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিল লক্ষ্মীর সঙ্গে। ও খুব কষ্ট করেছে এক ছেলে নিয়ে, দিনের পর দিন। টালিগঞ্জে অভিনয় করেছিল, তবে সাইড রোলে।

রাজ্জাকের কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারেন না তিনি। হিটলার বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৬৪’র দাঙ্গায় ওকে মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে হলো। ওকে রাখতে পারলাম না।

শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে রাজ্জাক ছিলেন পাড়ার মেয়েদের হিরো- এমনটা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ও ছিল আমাদের চকোলেট বয়। পাড়ার সব বাড়িতে ছিল ওর অবারিত দ্বার। আমাদের বাড়ি হিন্দু রক্ষণশীল পরিবার হলেও রাজ্জাক ঠাকুরঘরে ঢুকতে পারত। শুধু তাই নয়; আমার দিদিমা মরে যাওয়ার পর ও কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গিয়েছিল।

রাজ্জাক ১৯৪২ সালে ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সিনেমায় ‘নায়করাজ’ উপাধি পেয়েছিলেন তিনি।

হিটলার

ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। সত্তরের দশকে তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।

আখেরি স্টেশন, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, অশ্রু দিয়ে লেখা, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক।

নায়করাজ রাজ্জাক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। এছাড়া ইন্দো-বাংলা কলা মিউজিক পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আজীবন সম্মাননা (চলচ্চিত্র), ইফাদ ফিল্ম ক্লাব পুরস্কার পান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ২৩ আগস্ট ২০১৭,

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস