করোনা প্রতিরোধে ‘আমিত্ব’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ

বছরব্যাপী আমরা আমিত্ব-জ্বরে ভুগি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, চলনে-বলনে, কাজে, সবকিছুতেই প্রায় আমরা অনেকেই ‘আমি’টাকে জাহির করে থাকি। আমি এই করেছি, আমি ওই করেছি, আমি এটা পারি, আমি এটা পারি, আমার জন্য এই সাফল্য হয়েছে, আমার জন্য অফিস এখন ভালো চলছে, আমি শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিই, আমি অমুকের উপকার করেছি, আমি তমুকের জীবন বাঁচিয়েছি, আমি ঘরের কাজে সাহায্য করি, আমি খারাপ কথা বলি না, আমি কারও ক্ষতি করিনি, আমি এই ভালো কাজ করেছি, আমি ওই ভালো কাজ করেছি, আমি এভাবে কথা বলি না, আমি ওভাবে চিন্তা করি না, আমার পরিবারের ভালো দিক এই এই, আমি অমুক পন্থী, আমি তমুক পন্থী, আমি কোনো পন্থী না, আমি নিজের নীতিতে চলি, আমি কারও নীতিতে চলি না, আমি সময়মতো অফিসে যাই, আমি সময়ের আগে অফিস থেকে বের হই না, আমি ভালো পিৎজা বানাই, আমি বাগান করি, আমি ছাদে সুন্দর বাগান করেছি, আমি নিজে গাড়ি পরিষ্কার করি, আমি কাজের লোককে সাহায্য করি, আমি কর্মচারীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করি, আমি কারও ক্ষতি করি না, এ রকম আরও অনেক ‘আমি’।

অর্থাৎ নানাবিধ আমিত্ব। এই ‘আমিত্ব’ ইতিবাচক ধরে নিচ্ছি। যিনি পারেন তিনিই বোধ হয় এই ‘আমি’তে অহংকারী হয়ে ওঠেন অথবা আত্মপ্রচারে সুখ পান (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। সে যা–ই হোক, এবার করোনা (কোভিড-১৯) প্রসঙ্গে আসা যাক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কিছু নিয়ম পালন করতে। এরই মধ্যে আমরা জেনে গিয়েছি করোনা বৈশ্বিক মহামারি। বাংলাদেশ সরকার করোনা প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আমাদেরকে এই মহামারি থেকে সুরক্ষা দেবে, যদি জনগণ সরকারকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করেন। সরকার এবং জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ক্ষেত্রে। সরকার এরই মধ্যে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে, এবার আমাদের পালা। আর তখনই ‘আমিত্বে’র প্রসঙ্গ আসে। প্রথমে করোনা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় বিষয় জানা যাক—

১. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
২. হাত কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে ধোয়া (অন্তত ২০ সেকেন্ড)।
৩. হাঁচি, কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা।
৪. হাত ভালোভাবে না ধুয়ে মুখে, চোখে, নাকে স্পর্শ না করা।
৫. প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া।
৬. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
৭. অসুস্থ বোধ করলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলা।
৮. বিদেশ থেকে এসে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ইত্যাদি।

আরও কিছু নিয়ম আছে, যা পালন করতে পারলে ভালো। এখন প্রশ্ন, আমরা কি এখন ‘আমিত্ব’কে উসকে দিতে বা ব্যবহার করতে পারি না? করোনা প্রতিরোধে যত নিয়ম আছে, সব পালন করে আমরা বলতে যারা পছন্দ করি, তারা বলতে তো পারব, আমি হাত ধুচ্ছি নিয়মিত, আমি সামাজিক দূরত্ব ঠিকভাবে পালন করছি, আমি যেখানে–সেখানে থুতু ফেলছি না, আমি হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলছি, অপ্রয়োজনে আমি ঘরের বাইরে যাচ্ছি না, অপ্রয়োজনে হাত চোখ, নাক, মুখে দিচ্ছি না। আমরা যদি এই ‘আমি’তে থাকি, তাহলে খুব সহজেই করোনাকে পরাজিত করতে পারব। শুধু তা–ই নয়, ঘরের কাজ যেমন বিছানা গুছিয়ে, ঘর পরিষ্কার করে, রান্না করে, অযথা কোনো বস্তুতে হাত স্পর্শ না করে, আবর্জনা তৈরি না করে, বাথরুম পরিষ্কার করে অর্থাৎ সব কাজ পরিবারের সক্ষম ব্যক্তিরা ভাগাভাগি করলে এই সময়ে ‘আমি’তে ভুগতে পারি। এই আমিত্ব হবে যুদ্ধের মতো। অর্থাৎ যারা আমরা আমিতে ভুগি, তারা অনায়াসে আরও বেশি ‘আমি’তে অবস্থান করতে পারব। প্রত্যাশা, করোনা পরাজিত হওয়ার পর আমরা প্রত্যেকেই ‘আমি’তে পৌঁছাতে পারব। জয় হোক দেশবাসীর, পরাজিত হোক করোনাভাইরাস।

*লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়