জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই কি করোনা? আতঙ্ক নয়

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশ্বের ১৭২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

করোনা ভাইরাসের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। তবে লক্ষণীয় যে জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই কি তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলে আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন? নিজেকে গৃহবন্দি করে ফেলবেন? ছুটে যাবেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে?

চিকিৎসকেরা বলছেন, না। তার কোনো দরকার নেই। তাতে অযথা মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা হবে। কারণ, মরসুম বদলালে অনেকেরই জ্বর, সর্দি, কাশি হয়। যারা ‘ক্রনিক পেশেন্ট’, তাদের তো বেশিরভাগই হয় জ্বর, সর্দি, কাশি।

আমাদের দেশের আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি হতে পারে। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে পুরো বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন তখন বাড়তি সতর্কতা নিশ্চয়ই প্রয়োজন।

কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ডাক্তারদের পরামর্শ, জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই চলে যান ডাক্তারের চেম্বারে। দেরি করবেন না। বা অবহেলা করে বাড়িতেই চেনাজানা ওষুধ খেয়ে তা কমানোর চেষ্টা করবেন না। তা হলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।

চেম্বারে গেলে চিকিৎসকেরা আপনাকে কী কী প্রশ্ন করবেন?

কলকাতার একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন:

জ্বর হলেই জানতে চাওয়া হবে তা কতদিন হয়েছে?

জ্বর দিনে কয়বার আসছে? সেটা কী ভাবে কতটা ওঠানামা করছে?

জ্বর কি কাঁপুনি দিয়ে আসছে?

প্রথম সাক্ষাতেই আপনার কাছ থেকে এই সবকিছু জেনে নেওয়া হবে। যদি দেখা যায় জ্বরটা কাঁপুনি দিয়ে আসছে, তা হলে ম্যালেরিয়ার সম্ভাবনা খুঁজে দেখতে শুরু করবেন চিকিৎসকেরা। যদি দেখা যায় জ্বরটা ছেড়ে বা কমে গিয়ে দিনদুয়েক পর তা আবার প্রবল ভাবে ফিরে আসছে, তা হলে ডেঙ্গির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখবেন ডাক্তাররা।

তবে জ্বর হলে প্রথমেই করোনা আতঙ্কে না থেকে নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি পরামর্শগুলো মেনে চলুন:

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বর হলে-
• স্যুপ, হারবাল চা, কফি, মধু দিয়ে গরম পানি বারবার পান করুন

• শরীরের অতিরিক্ত তাপ হলেই আমরা জ্বর বলি। সিজনাল জ্বর হলেও থার্মোমিটার দিয়ে নিয়মিত জ্বর মেপে একটি ছক করে লিখে রাখুন

• হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে বারবার শরীর মুছে নিন। এতে জ্বরের তাপ কমবে

• ঠাণ্ডা সর্দিতে আমাদের নাক চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, টিস্যু দিয়ে বারবার নাক মোছার ফলে অনেক সময় নাকের চামড়া ছিলে যায়। এজন্য নাক বেশি ঘষা যাবে না। নাকে ক্রিম ব্যবহার করুন

• ভিটামিন সি জাতীয় ফল লেবু, কমলা, পেঁপে, পেঁয়ারা, আমলকি বেশি বেশি খান। ঠাণ্ডা কমবে আর খাবার খেতেও রুচি হবে

• অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে হাত সব সময় পরিষ্কার করতে হবে

• দাঁত মাজার ব্রাশ, চিরুনি, তোয়ালে এগুলো আলাদা রাখতে হবে

• কাশি ও হাচিঁ দেওয়া সময় রুমাল ব্যবহার করুন

• হাত দিয়ে ঘন ঘন নাক অথবা চোখ চুলকানো যাবে না

• নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে

• পরিবারের কেউ ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সাবধানে রাখুন। ভাইরাল ফেভারের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা না করাই ভালো।

• আর বৃদ্ধদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাদের জন্য নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।

উপসর্গগুলো দ্রুত সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।