অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় আবারও প্রাণহানি। এবার মারা গেলেন মাদারীপুরের রাজৈরের দুই যুবক। তারা হলেন, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের চরমস্তফাপুর গ্রামের আবু হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার (২২) ও একই উপজেলার শাখারপাড়ের সিদ্দিক মাতুব্বরের ছেলে নাসির মাতুব্বর (৩৪)।
জানা যায়, ভাগ্যের চাকা বদলের আশায় লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বের হন রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের চরমস্তফাপুর গ্রামের সুমন হাওলাদার। লিবিয়া পৌঁছে ৪ মার্চ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওয়ানা দেন সুমনসহ ১০ যুবক। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিনে আগুন ধরে। এতে পানিতে ডুবে মারা যায় সুমন।
একইভাবে এ সময় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় শাখারপাড়ের নাসির মাতুব্বরও। রোববার মৃত্যুর খবর আসলে শোকে পাথর পরিবার।
স্বজনরা জানায়, মানবপাচারচক্রের সক্রিয় সদস্য রাজৈরের শাখারপাড়ের আলী মোল্লার ছেলে আরিফ মোল্লা ও নওগাঁ জেলার দিপু দালাল ইতালি নেয়ার কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে নেয় ১৭ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে আরিফের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে, তার আত্মীয় ঘটনার সত্যতা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
অভিযুক্ত আরিফ মোল্লার খালু ও প্রতিবেশী মো. রাশেদ হাওলাদার বলেন, ‘আরিফ বর্তমানে লিবিয়ায় আছে। তার বাবা আলী মোল্লা এ পর্যন্ত ২০-২৫ জন মানুষ ইতালি নিয়েছেন। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আরিফ কিংবা তার বাবা জোর করে কারও পাসপোর্ট আর টাকা চান না। বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে মানুষ পাসপোর্ট ও টাকা দিয়ে যায়। এই ঘটনায় আরিফ কিংবা তার বাবার কোনো দোষ নাই।’
নিহতদের পরিবার জানায়, দুই যুবক মারা যাবার পর শোকে পাথর তারা। ধারদেনা করে লাখ লাখ টাকা দিয়েছে অসহায় পরিবার। একদিকে ঋণ শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা আর অন্যদিকে স্বজনের মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষুব্ধ আইন বিশেষজ্ঞরা। আর পুলিশ বলছে এ ব্যাপারে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।
মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুজন ভৌমিক বলেন, ‘এলাকার মাফিয়া ও দালালরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও মূলহোতারা থাকে লিবিয়া ও ইতালিসহ অন্য জায়গায়। তারা কখনই গ্রেফতার হয় না। এজন্যই এই অপরাধের প্রবণতা কমছে না। মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনা হলে মানবপাচার জেলা থেকে কমে যাবে।’
মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আরমিন বলেন, ‘মানবপাচার চক্রটি অনেক শক্তিশালী। ঘটনার তেমন কোনো প্রমাণপত্র চক্রটি রাখতে চায় না। এজন্য আইনের হাত থেকে তারা বেঁচে যায়। এ ব্যাপারে সবাই সচেতন হলে এই সুযোগ চক্রটি আর পাবে না।’
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, ‘দুই যুবক মারার যাওয়ার তথ্য পুলিশের কাছে এসেছে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছর অবৈধভাবে ইতালি যাবার পথে জেলার অন্তত ১৬ জন যুবক মারা গেছেন। এরমধ্যে গত ২৪ জানুয়ারি মৃত্যু হয় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবকের।