হজ প্যাকেজে উচ্চমূল্যের প্রভাব নিবন্ধনে

আগামী বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধনে সাড়া মিলছে না। দ্বিতীয় দফায় সময় বৃদ্ধির পর নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৪ হাজার ৪৯৭ হজযাত্রী। বাংলাদেশ থেকে আগামী বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। সে হিসাবে মোট হজযাত্রীর ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে ৩১ ডিসেম্বর হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে। এ সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিবন্ধনের সময় বাকি আছে মাত্র ১০ দিন। এ অল্প সময়ে বাদবাকি ১ লাখ ১২ হাজার ৭০১ হজযাত্রীর কোটা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তারা বলেন, হজ প্যাকেজে সরকার নির্ধারিত উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে এবারের নিবন্ধনে। এতে করে হজের কোটার বড় একটি অংশ ফেরত যাবে সৌদি আরবে।

চলতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরে প্রত্যাশিত হজযাত্রীর সাড়া না পাওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।

জানা যায়, হজ প্যাকেজের খরচ বেশি হওয়ায় গত বছরও হজযাত্রীদের সাড়া মেলেনি। এতে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ৫ হাজার আসন খালি ছিল। দেশের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক হজযাত্রী প্রাকনিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না। এবার সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ হবে। বিশেষ হজ প্যাকেজে খরচ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অপরদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। প্রথম প্যাকেজের (সাধারণ) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছর ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে।

হজে যেতে ইচ্ছুক একাধিক হজযাত্রী যুগান্তরকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা অনেক বেশি। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবকে এ প্যাকেজের অর্থ কমাতে হবে। নচেৎ গত বছরের মতো এবারও হজ ফ্লাইট খালি যাবে। মো. কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা গত বছরই সপরিবারে হজে যেতে নিবন্ধন করেছিলাম। কিন্তু হজ প্যাকেজ বেশি হওয়ায় যেতে পারিনি। এ বছরও যাওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও যেভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে এ বছরও যেতে পারব কিনা আল্লাহ জানেন। তিনি হজ প্যাকেজের মূল্য আরও অন্তত ১ লাখ টাকা কমানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি কোটায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। গতবারের তুলনায় এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার আসন বেশি নিবন্ধন করার সুযোগ থাকছে।

২০২৪ সালের হজযাত্রী নিবন্ধনের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজকীয় সৌদি সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের হজযাত্রীর চূড়ান্ত তালিকা ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির মধ্যে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।

২০২৪ সালের হজে মিনার তাঁবু এলাকাকে ৫টি জোনে এবং প্রতিটি জোনকে ৪টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে মিনায় তাঁবু বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হজযাত্রীর সংখ্যা পাওয়া না গেলে মিনায় কাঙ্ক্ষিত স্থানে তাঁবু পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে মিনায় জামারাহর নিকটবর্তী এলাকার পরিবর্তে দূরবর্তী, নিউ মুযদালিফা ও পাহাড়ি এলাকায় তাঁবু গ্রহণ করতে হবে। এরূপ পরিস্থিতি এড়াতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় চূড়ান্তভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়।

এদিকে, সরকারি মাধ্যমে সব প্যাকেজে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করা যাবে। প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে একই ব্যাংকে জমা দিতে হবে। প্রাথমিক নিবন্ধনের পর অবশিষ্ট টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি হজে যেতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে প্রদত্ত ২ লাখ ৫ হাজার টাকা মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি বাবদ ব্যয় হবে বিধায় ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে না।

নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হজযাত্রীর নিবন্ধনের ক্রম অনুসারে সরকারি মাধ্যমের ভাড়া করা বাড়ির মধ্যে হারাম শরিফ থেকে অপেক্ষাকৃত কাছের বাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রাথমিক নিবন্ধনের অর্থ জমা দেওয়ার পর প্যাকেজ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। হজ এজেন্সির নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব ছাড়া প্রাকনিবন্ধন ও নিবন্ধনের টাকা কোনো ব্যক্তির কাছে নগদ প্রদান করা যাবে না এবং হজ এজেন্সিও নগদ অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না। হজ কার্যক্রমের সব সেবা ও প্যাকেজ মূল্য বিস্তারিত উল্লেখ করে হজযাত্রী ও এজেন্সির মধ্যে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে কোনো পক্ষের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না। হজে গমনের শর্তাবলী, করণীয় ও হজযাত্রীর সুযোগ-সুবিধা হজ প্যাকেজ ২০২৪ হতে বিস্তারিত জানা যাবে। হজসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য ১৬১৩৬ নম্বরে ফোন করে ও www.hajj.gov.bd হতে জানা যাবে।

হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, হজের সময় মিনার তাঁবু পাওয়া যায় না। তাই এই বছর আমরা আগেই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ২১ শতাংশ নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। সামনে যে কদিন সময় বাকি আছে এতে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে। এবার নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, হজযাত্রীরা ধারণা করতে পারেন অনেক সময় পাওয়া যাবে। এই ধারণা ভুল। বিগত হজ মৌসুমের নিবন্ধনের সময় আমরা অল্প অল্প করে সময় বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু এবার একসঙ্গে অনেক দিন বাড়ানো হয়েছে।

 

 

Scroll to Top