রমজান – বরকতময় মাস, আত্মশুদ্ধির মাস, রহমত ও মাগফিরাতের মাস। এ মাস শুধু রোযার নয়, বরং এক গভীর আত্মগঠন, আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ। আল্লাহ আমাদের ওপর এই মাসের রোযাকে ফরজ করেছেন, যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। কিন্তু রমজানের প্রকৃত হক আদায় করতে হলে কেবল উপবাস থাকলেই চলবে না; বরং এর চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে। আসুন, আমরা দেখি কীভাবে আমরা রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারি।
১. রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা: রমজান শুধু উপবাসের নাম নয়; এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত যেন আমরা এক মাসের রোযার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারি এবং গুনাহমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করি।
২. সালাত ও ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব: রমজান আমাদের জন্য ইবাদতের বিশেষ সুযোগ নিয়ে আসে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত পড়ার পাশাপাশি তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত।
৩. কুরআন তিলাওয়াত ও অনুধাবন: রমজান কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা, অর্থ ও তাফসীর বোঝার চেষ্টা করা এবং তা জীবনে বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. আত্মসংযম ও ভালো আচরণ: রমজানের অন্যতম শিক্ষা হলো আত্মসংযম। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই যথেষ্ট নয়; আমাদের উচিত রাগ, ক্ষোভ, গীবত, মিথ্যা, পরনিন্দা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা।
৫. দান-সদকা ও গরিব-দুঃখীদের সাহায্য: রমজান দানশীলতার মাস। যাকাত ও ফিতরা প্রদান করা ছাড়াও সাধারণভাবে গরিবদের সহায়তা করা, অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
৬. দোয়া ও ইস্তিগফার করা: রমজান মাগফিরাতের মাস। তাই বেশি বেশি তওবা করা, গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কান্নাকাটি করা উচিত। বিশেষ করে ইফতারের সময় ও শেষ রাতে দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তগুলো কাজে লাগানো উচিত।
৭. সময়ের যথাযথ ব্যবহার: রমজান সময়ের অপচয় করার মাস নয়, বরং সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টিভি বা বিনোদনে সময় ব্যয় না করে বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন অধ্যয়ন ও আত্মশুদ্ধির কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত।
৮. পরিবারের সাথে ইবাদত করা: রমজানে পরিবারের সবাই মিলে ইবাদত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সন্তানদের রোযার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, তাদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া এবং ধর্মীয় আলোচনার আয়োজন করা উচিত।
৯. সুন্নত ও নফল ইবাদতে মনোযোগী হওয়া: রমজান শুধুমাত্র ফরজ ইবাদতের মাস নয়, বরং এ মাসে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই বেশি বেশি নফল নামাজ, দোয়া, জিকির ও অন্যান্য ইবাদতে সময় দেওয়া উচিত।
১০. শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা: রমজানের পর শাওয়ালের ছয়টি নফল রোযা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখে এবং এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম)
রমজান আমাদের জীবনে একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়, যা আমাদের আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়। যদি আমরা সত্যিকার অর্থে এই মাসের হক আদায় করতে পারি, তবে আমাদের জীবন বদলে যেতে পারে। তাই আসুন, আমরা রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে তাকওয়াভিত্তিক জীবন গড়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রকৃত হক আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ, মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর