ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব

জাকাত আদায়ের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বান্দার সম্পদ পযিত্র করে দেন এবং সম্পদে বরকত দান করেন। বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় রমজান মাসে জাকাত আদায়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কেননা এ সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রত্যেকটি নেক আমলের সাওয়াবকে সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে দেন।

তিনি চাইলে সেই সাওয়াবও অগণিত হতে পারে। মনে রাখতে হবে জাকাত ধনীদের দয়া বা অনুগ্রহ নয়, বরং এটি গরিবের হক। তাই জাকাত আদায় করে গরিবের উপর গর্ব করার কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা ধনীদের উপর জাকাত আদায় করা ফরজ করেছেন। ইরশাদ করেছেন, তোমরা নামায কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো। (সুরা মুযযাম্মিল ২০)

জাকাত আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার অত্যাধিক প্রিয় বান্দা হিসেবে ঘোষিত। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত হতে বহুদূরে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, আল্লাহর প্রিয় বান্দার নিকটবর্তী, জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটে। একজন জাহিল দানশীল, আল্লাহর নিকট অনেক বেশি ইবাদতকারী অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অনেক বেশি পছন্দনীয়। (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা ধনীদেরকে ধন-সম্পদ দান করেছেন পরিক্ষা করার জন্য, কে এই নশ্বর ও অস্থায়ী বিষয়াবলীতে ফেঁসে গিয়ে আখেরাতের স্থায়ী ও অবিনশ্বর নিয়ামতসমূহ ভুলে যায়, আর কে এই উপকরণাদিকে নিজ আখেরাতের পাথেয়রূপে গ্রহণ করে সেখানকার বিরাট প্রতিদানকে এখানকার ভোগ-বিলাস ও প্রিয় জিনিসপত্রের উপর অগ্রাধিকার দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরিক্ষার বস্তু। আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহা প্রতিদান। (সুরা তাগবুন ১৫)

হজদরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) -এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা.)-কে তার স্থলাভিসিক্ত করা হয়। এই সময়ে আরবের কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়। এমতবস্থায় উমর (রা.) আবু বকর (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি মুরতাদ লোকদের বিরুদ্ধে কিরূপে যুদ্ধ করবেন? অথচ রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে, যতক্ষণ না লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।

অতঃপর যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য জান-মাল আমার নিকট নিরাপদ। অবশ্য শরিয়তের দৃষ্টিতে তার উপর দন্ড আসলে তা কার্যকর হবে ও তার হিসাব-নিকাশ আল্লাহর নিকটে। আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো, যারা নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে। কেননা জাকাত হলো ধন- সম্পদের হক। আল্লাহর কসম! তারা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে যে রশি জাকাত দিত, যদি তাও দিতে তারা অস্বীকার করে, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করবো।

উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! তখন আমি উপলদ্ধি করতে পারলাম যে, তিনিই (আবু বকর (রা.) সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। (বুখারি ও মুসলিম) আল্লাহর রাস্তায় খরচের লাভ কী, এবং এর মুনাফা কত হবে তা জানা দরকার। যেহেতু লাভ ছাড়া দুনিয়াতে কেউ কোন কাজ করে না। তাই আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে লাভের পরিমাণ জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় ধন সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানা। যাতে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ’ করে দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। (সুরা আল-বাকারা: ২৬১)

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচতে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা। সুতরাং নিজে জাকাত আদায় করি, অন্যকে জাকাত দানে উৎসাহিত করার মাধ্যমে সমাজের দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখি।

যাদের উপর জাকাত ফরজ: স্বাধীন, জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারী যখন নিসাব পরিমাণ মালের পূর্ণ মালিক হয় এবং তার উপর একবছর অতিক্রান্ত হয়, তখন ঐ ব্যক্তির মালের উপর জাকাত ফরজ হয়। আর কোন ব্যক্তির নিকট যখন তার বসবাসের ঘর ব্যবহারের কাপড়-চোপড়, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তার আয়ের উৎস গাড়ি-বাড়ি, মিল-ফ্যাক্টরী ইত্যাদি ব্যতীত সাড়ে সাততোলা সােনা (প্রায় ৮৮ গ্রাম) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) বা সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সম্পদ একবছর কাল স্থায়ী হয়, তখন সে মালকে নিসাব বলে। এবং তার উপর জাকাত ফরয হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকা ও মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলেও তার উপর জাকাত ফরয হবে না।

লেখক: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

Scroll to Top