৪৩০ রানের ম্যাচে কলকাতার শততম জয়

দীর্ঘ ছয় ম্যাচের অপেক্ষার অবশেষে অবসান। রাজস্থান রয়্যালসকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে আসার পরই কাউন্ট ডাউন শুরু করে দেন নাইট সমর্থকরা। কারণ, আইপিএল ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে সেটি ছিল কলকাতার ৯৯তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়। অর্থাৎ আর একটি ম্যাচে জয় মানেই সেটি হবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কেকেআর মাইলস্টোন সূচক।

কে জানত, চিপকে চেন্নাই ম্যাচ থেকে যে হারের ধারাটা শুরু হবে, তা বজায় থাকবে দীর্ঘ ছয়টি ম্যাচ! এক সময় প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতে যে কলকাতা লিগ টেবিলের শীর্ষে ছিল তারাই টানা ছয়টি ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে যায়। বাকি সব ম্যাচ জিতলেও প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত, এমনটা বলা যাবে না কখনই। তবে পান থেকে চুন খসলে এবারের মতো যে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

অর্থাৎ, জিতলে টুর্নামেন্টে ভেসে থাকা যাবে। হারলে ছিটকে যেতে হবে লড়াইয়ে থেকে। আইপিএলে এমন ডু অর ডাই পরিস্থিতিতে রবিবার মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যত নক-আউট ম্যাচে মাঠে নামে কলকাতা। টস ভাগ্যের সঙ্গ না পেয়েও কেকেআর ২ উইকেটে ২৩২ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তোলে মূলত তাদের গেম প্ল্যানে পরিবর্তন ঘটিয়ে। ক্রিস লিন ও শুবম্যান গিলের ওপেনিং জুটি শক্ত ভিতে বসিয়ে দিয়ে যায় দলকে। আন্দ্রে রাসেল স্বভাব সুলভ আগ্রাসনে সেই ভিতে বিশাল ইমারত গড়ে তোলেন। লিন ২৯ বলে ৫৪, গিল ৪৫ বলে ৭৬ ও রাসেল ৪০ বলে অপরাজিত ৮০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন।

চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ দলগত ইনিংস গড়েও জয়ের জন্য এমন বেগ পেতে হবে কেকেআরকে, সেটা বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবেননি দিনেশ কার্তিকরা। টিম ইন্ডিয়ার তারকা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ৬টি চার ও ৯টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ৩৪ বলে ৯১ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে কলকাতার কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার উপক্রম করেছিলেন। চলতি আইপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি (১৭ বলে) করেন তিনি। তবে ১৮তম ওভারের শেষ বলে পান্ডিয়া আউট হতে তবেই কলকাতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। শেষমেশ মুম্বাই থামে ৭ উইকেটে ১৯৮ রানে।

দলকে জেতাতে না পারলেও পান্ডিয়ার এমন অতিমানবিক ইনিংস প্রশংসা কুড়িয়ে নেয় প্রত্যেকের। আউট হয়ে ডাগআউটে ফেরার সময় রাসেলরা দৌঁড়ে এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে যান হার্দিকের। ইডেনের গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানায় তাঁকে। ম্যাচের শেষে কেকেআর মালিক শাহরুখ খানও অভিবাদন জানান পান্ডিয়াকে।

স্বস্তির জয়ে কলকাতা প্লে-অফের লড়াইয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখল এ যাত্রায়। পাশাপাশি ১০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের মাইলস্টোনও স্থাপন করে কিং খানের কেকেআর। চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পর আইপিএলের তৃতীয় দল হিসাবে ১০০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব দেখায় নাইট রাইডার্স। আইপিএলের তিনটি দল ছাড়াও একশোর বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের নজির রয়েছে কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ার, নটিংহ্যামশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের। কলকাতার এমন স্মরণীয় জয়ে রাসেল নায়কের মর্যাদা পেলেও ট্র্যাজিক হিরো হয়ে থেকে যান হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান আন্দ্রে রাসেল। ম্যাচে দুই দলের মোট রান ৪৩০।