বারবার বাঁশি দিয়ে ম্যাচ থামানোয় রেফারিকেই দুষছেন ব্রাজিল কোচ

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে অ্যানহেল ডি মারিয়ার করা একমাত্র গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। অবসান হয়েছে ২৮ বছরের অপেক্ষার। এতে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে হোঁচট খেল ব্রাজিল। রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালের ম্যাচে ফাউলের রেকর্ড হয়েছে। ব্রাজিল করেছে ২২টি, আর আর্জেন্টিনা করেছে ১৯টি ফাউল। ফাউলের এমন ছড়াছড়িতে গতি হারিয়েছে ম্যাচ। কারণ উরুগুয়ান রেফারি এস্তেবান ওস্তোজিচ বারবার বাঁশি দিয়ে ম্যাচ থামিয়েছেন।এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ হারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্রাজিল দলের কোচ তিতে। তাই ম্যাচ শেষে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রেফারিকে! সেইসঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি।

তিতে বলেন, ‘খেলাটাকে অসংখ্যবার থামানো হয়েছে। ফাউল আদায়ের জন্য পুরো সময়টায় দেখা গেল ডাইভিং। আর সেই ফাউলের জন্য যেন অনন্তকাল সময় নি ল তারা! খেলাটাকে চালু রাখতে পারেননি রেফারি। মূলত কৌশলই ছিল খেলার গতি ভঙ্গ করা।’ রোববার (১১ জুলাই) ফাইনালের ওই ম্যাচটিতে ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেছিল ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। শুধু বল দখলই নয়, শুট, পাস, গোলে শট, সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল নেইমাররা। শুধু গোলটি করতে পারেননি তিতের শিষ্যরা।

ম্যাচের প্রথমার্ধের ২২ মিনিটে ডি পলের লং পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন ডি মারিয়া। প্রথমার্ধে ওই গোল আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। ফলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় মেসির দল। আর এই গোলের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এর আগে প্রায় সব ম্যাচেই বদলি হেসেবে নেমেছিলেন তিনি। তবে ফাইনালে শুরুর একাদশে তাকে নিয়ে আসেন কোচ স্কালোনি। আর তাতেই বাজিমাত।

লিওনেল মেসি আলো ছড়াতে পারেননি। কিন্তু সে দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছেন ডি মারিয়া। এছাড়া, এবারের আসরে মেসি পেয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কার। গ্রুপ পর্ব ও নকআউট পর্ব মিলিয়ে ছয় ম্যাচের সবকটিতেই খেলেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি। গোলদাতার তালিকাতেও আছেন সবার শীর্ষে। তার গোল সংখ্যা ৪টি। এ ছাড়া অ্যাসিস্টেও শীর্ষে অবস্থান তার। সর্বোচ্চ পাঁচটি অ্যাসিস্ট করে সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন তিনি।

খেলা শেষে মেসি যখন ট্রফি হাতে নেওয়ার অপেক্ষায় উল্লাসে ব্যস্ত, তখন অঝোরে কাঁদছিলেন নেইমার। কোপা আমেরিকার ট্রফি জিততে না পারার কান্না। প্রতিপক্ষের বন্ধুকে কান্নারত অবস্থায় দেখে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন মেসি। জড়িয়ে ধরলেন। না পাওয়ার আক্ষেপের কষ্ট তো মেসিরও দীর্ঘদিনের। হয়তো বুকে জড়িয়ে সেটাই মনে করাতে চাইলেন। হয়তো কানে কানে বললেন, এটাই শেষ নয় সুযোগ আসবে আবার।
৫ ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচসেরা। আর তাই সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বল এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বুট উঠেছে মেসির হাতে। আসরে মেসিই সর্বোচ্চ ড্রিবল করা এবং সবচেয়ে বেশি সফল পাস দেওয়া খেলোয়াড়। সুযোগ তৈরির হিসেবেও সবাইকে ছাড়িয়ে ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা। ফাইনালের গোলদাতা ডি মারিয়া হয়েছেন ম্যাচসেরা।

তবে ফাইনালের আগে কনমেবলের ওয়েবসাইটে শনিবার (১০ জুলাই) দেওয়া বিবৃতিতে সেরা হিসেবে দুজনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। মেসির পাশাপাশি ছিল ব্রাজিলের নেইমার। তবে তার ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়, ‘কোনো একজনকে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ প্রতিযোগিতাটিতে দুজন সেরা খেলোয়াড় আছে।’

মেসিদের এ জয়ে কোপা আমেরিকায় সর্বাধিক ট্রফি জয়ীদের তালিকায় উরুগুয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো আর্জেন্টিনার নাম। দুই দলই সর্বোচ্চ ১৫ আসরে ট্রফি তুলেছে নিজেদের ঘরে। এ ছাড়া কোপা আমেরিকায় ৯টি ট্রফি নিজেদের ঘরে তুলেছে ব্রাজিল। প্যারাগুয়ে ২টি ট্রফি, চিলি ২টি ট্রফি, পেরু ২টি ট্রফি, কলম্বিয়া ১টি ট্রফি ও বলিভিয়া ১টি ট্রফি তুলেছে নিজেদের ঘরে।