‘পালাউ’ নামক দেশের এক বাংলাদেশী ফুটবল ক্লাবের গল্প!

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের ৫০০টি দ্বীপের একটি দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে ‘পালাউ’। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, দেশটির শীর্ষ লীগে খেলে ‘টিম বাংলাদেশ’ নামক একটি ক্লাব, যা দেশটির সবচেয়ে পুরনো ক্লাব। এটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সর্বোচ্চ ৩ বারের লীগ শিরোপাধারী টিম এটি! বলাইবাহুল্য যে দলটি বাংলাদেশিদের নিয়েই গঠিত। পালাউ ফুটবল এসোসিয়েসনের ২০১২ সালের তালিকা অনুযায়ী দলটির একমাত্র বিদেশি খেলোয়াড় ছিল ফিজি’র মালাকাই বিতু। ২০০৪-এ দেশটির অভিষেক লীগে যে সকল ক্লাব অংশগ্রহণ করেছিল তাদের ভেতর একমাত্র টিম বাংলাদেশই ২০১২ এর লীগ পর্যন্ত টিকে ছিল এবং পরবর্তীতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

নাকি ঠিক বিলুপ্ত হয়েছিল, কিংবা নাম পরিবর্তন হয়েছিল- সেটাও একটা ব্যাপার! দলটির বিলুপ্তির কথা বললাম, কিন্তু ২০১২ সালে সেখানকার পরবর্তী ফুটবল মৌসুমে (২০১৪ সাল) টিম ফ্রেন্ডশিপ নামে নব্য গঠিত একটি দল রানারআপ হয়, বিভিন্ন ম্যাচে যাদের গোলদাতাদের নামে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম তারা বাংলাদেশি। ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে টিম বাংলাদেশ-এর ২০১২ সালের খেলোয়াড় তালিকার কিছু নামের সাথে মিলও ছিল। হতে পারে ফেডারেশন থেকে বলা হয়েছিল যে এভাবে একটি দেশ অনুযায়ী ক্লাবের নামকরণ বজায় না রাখতে কিংবা ক্লাবটি পর্যাপ্ত বাংলাদেশি ফুটবলারের অভাব অনুভব করছিল এবং সে অনুযায়ী অন্যান্য জাতীয়তার ফুটবলার দলভুক্ত করতে বাধ্য হয়ে পরে ক্লাবটির নামও পরিবর্তন করে।

তবে এটাও হতে পারে ওখানে ২০১৪ সালের পর আর কোন লীগ হয়েছিল কিনা। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজে ওই সময়ের পর থেকে কোন তথ্য নেই।

২০১৪ সালের লীগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলো- টিম ফ্রেন্ডশিপ, ক্রেমারস্ এফসি, নিউ স্টারস্ এফসি, লিও এফসি, সুরাঙ্গেল কিংস্।

ফেডারেসনের ওয়েবসাইটে ২০১২ সালে লিপিবদ্ধ টিম বাংলাদেশ এর বাংলাদেশি ফুটবলারবৃন্দ-

ফিরোজ মাহবুব, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, শামীম হোসেন, লোকমান হোসেন, মহসিন মিয়া, রুহুল আমিন, নিজাম, সাখাওয়াত হোসেন, মঈন উদ্দিন, আওলাদ হোসেন।

ফুটবল বিশ্বে দেখা যায় এক দেশের ফুটবল ক্লাব প্রতিবেশী দেশের ফুটবল লীগে খেলে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ লীগে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ফিনিক্স কিংবা যুক্তরাস্ট্রের মেজর লীগ সকারে কানাডার মন্ট্রিয়াল ইম্প্যাক্ট। প্রতিবেশী না হলেও দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে ভালো সম্পর্কের সূত্র ধরে কিংবা ফুটবলীয় সাফল্যের সূত্র হিসেবে অন্য দেশের লীগে ক্লাব পাঠায়। যেমন জাপানীজ ক্লাব আলবিরেক্স নীগাতা যারা খেলে সিঙ্গাপুরে। ক্লাবটি সিঙ্গাপুরের জাপানিজ সম্প্রদায়ের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়। এ ছাড়াও লীগটিতে খেলে ব্রুনেই এর এক ক্লাব। অতীতের নানা সময়ে খেলেছে চাইনিজ, দক্ষিণ কোরিয়ান ও ফ্রেঞ্চ ক্লাব এবং মালয়েশিয়ার জাতীয় বয়সভিত্তিক দল। সম্প্রতি জানা গেছে যে জার্মানির চতুর্থ ডিভিসনে খেলবে চীনের অনুর্ধ্ব-২০ জাতীয় দল।

২০১২ সালের বসন্তকালীন লীগ জেতার পর টিম বাংলাদেশ দলের উল্লাস

টিম বাংলাদেশ কিন্তু উপরিউক্ত কিংবা অন্যান্য যে কোন সাধারণ প্রেক্ষাপটে পড়ছে না। এরকম কিছু ঘটেছে তা কল্পনাকেও যেন হার মানায়। এত দূরের এই অজানা অচেনা দেশে বড় সংখ্যায় আছেন বাংলাদেশিরা, এটাই তো দারুণ বিস্ময়। আদতে আপনার জানার সুযোগই কম যে এই নামে একটি দেশও আছে! পালাউ-এর ভিসা পেতে আমাদের যেতে হয় ফিলিপিনস্। তারপর আসে সেখানে জীবন-যাপনের বিভিন্ন দিক। এর ভেতর ওভাবে একটি ফুটবল দলই গঠন করে ফেলা! জীবন কোথায় নিয়ে যায়!

জনসংখ্যার দিক থেকে পালাউ বিশ্বের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ। প্যাসিফিক সাগরে অবস্থিত এ দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৯৪ সালে। তাদের ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয় ২০০২ সালে। দেশটি ফিফা সদস্যভূক্ত না এবং বিশ্ব ফুটবলে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তবে ৪৬৫ বর্গকিমি’র ও প্রায় ২১,৫০৩ জন জনসংখ্যার একটি ‘স্বাধীন দেশ’ এর ফুটবলে বাংলাদেশিদের ভূমিকা ও প্রভাব মোটেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। ৫,০৪২ কিমি দূরের একটি দেশে কি করে এই বিপ্লব ঘটেছিল আজ থেকে ১৩ বছর আগে, তা ভাবতেও অবিশ্বাস্য লাগে। অর্থহীন জানি, তবে আজ দেশের ফুটবলের এই দুঃসময়ে কেন জানি বার বার টিম বাংলাদেশ এর কথা মনে পড়ে। তথ্যসূত্র- এগিয়ে চলো.

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ