করোনা আতঙ্কে এলো না কেউ, বাবার লাশ কাঁধে নিলো চার মেয়ে

গোটা বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে করোনা। বদলে যাচ্ছে মানুষের আচার-আচরণও। সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়ে কমে যাচ্ছে মানিবক বোধও। সেজন্যই কি-না গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তে এখন নানা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটছে।

যেমনটি ঘটলো ভারতের উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভারতে মারা যাওয়া সঞ্জয় কুমারের (৪৫) লাশ শ্মশানে নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত শোকাহত চার কন্যাই কফিন কাঁধে তুলে বাবার লাশ নিয়ে গেছে শ্মশানে।

খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা চলছে। সাধারণ লোকজন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ‘সামাজিক দূরত্ব’ দেখালেও প্রশাসন কী করেছে, এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

মৃত ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় কুমার (৪৫)। আলীগড়ের নুমাইশ ময়দানের চা-হেলিংয়ের বাসিন্দা সঞ্জয় কুমার পেশায় চা বিক্রেতা ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন তিনি। অভাবের সংসারে সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ এনেই কোনো রকমে নিজের রোগ সারতে চাইছিলেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে, চার মেয়ে অভাবের কারণেই পড়াশোনা ছেড়ে ঘরে বসা।

সম্প্রতি সঞ্জয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে ঘোষিত ‘লকডাউনে’ ওষুধের আকাল চলছিল। এই পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ মিলছিল না তার। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খাওয়াও সম্ভব ছিল না সঞ্জয়ের পক্ষে। শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতেও পারলেন না। যক্ষ্মা রোগে মারা গেলেও নিকটাত্মীয় বা স্বজন কেউই সঞ্জয়ের সৎকারে এগিয়ে আসেননি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে। বাবার শোকে বিমূঢ় চার মেয়েই শেষে বাধ্য হয়ে লাশ কাঁধে নেয়। কাঁদতে কাঁদতেই লাশ নিয়ে যায় শ্মশানে। তারাই সারে শেষকৃত্য।