\’তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক\’

তাজমহলের ঐতিহ্যকে কটাক্ষ করে ফের সমালোচনার মুখে বিজেপি। এর আগে পর্যটন বুকলেটে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার তাজমহলের নাম বাদ দিয়েছিল। এ বার রাজ্যেরই এক বিধায়ক প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন, ওই স্মৃতিসৌধ ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক। একই সঙ্গে, তাজমহলের স্রষ্টাকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে তিনি ইতিহাস বদলেরও হুমকি দেন।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে সোমবার জানানো হয়, উত্তর প্রদেশের সারধনায় রোববার বিজেপির এক জনসভা ছিল।সেখানে ভাষণ দিচ্ছিলেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক তথা দলীয় নেতা সঙ্গীত সোম। সেখানে তিনি মুগল ইতিহাসকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন,\’রাজ্যের পর্যটন পুস্তিকায় তাজমহলের নাম বাদ পড়ায় নাকি অনেকেই ভীষণ হতাশ!আমরা কোন ইতিহাসের কথা বলছি?\’

এর পরেই তিনি বলেন, তাজমহলের স্রষ্টা (শাহজাহান) নিজের বাবাকেই বন্দি করেছিলেন। মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন হিন্দুদের অস্তিত্ব। এরাই যদি আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকেন, তা হলে তা খুবই দুঃখের। আমরা এই ইতিহাস বদলে দেব।’’

সঙ্গীতের ওই মন্তব্যের পরে ফের অস্বস্তিতে পড়ে যোগী সরকার।পাশাপাশি,বিজেপির মুখও পোড়ে। সেই অস্বস্তি কাটাতে তড়িঘড়ি সরকার এবং দলের তরফে জানানো হয়েছে,\’তাজমহল আমাদের গর্বের ঐতিহ্য’! পাশাপাশি বলা হয়,ওই মন্তব্য বিধায়কের একান্তই ব্যক্তিগত। তার সঙ্গে দল বা সরকারের কোনও যোগ নেই।\’

উত্তরপ্রদেশের পর্যটন মন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশীর কথায়, \’তাজমহল নিয়ে ওই ভাবনা বিধায়কের একান্তই ব্যক্তিগত। যোগী আদিত্যনাথ এবং আমি মনে করি, তাজমহল আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আগরা এবং তাজমহলের উন্নতির কাজে আমাদের সরকার দায়বদ্ধ।\’

কিন্তু, এত কিছু বলেও সমালোচনার ঝড় আটকানো যায়নি। সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র সিপি রাই বলেন,\’বিজেপি ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ইতিহাস বদল করা যায় না। ইতিহাসের কাছ থেকে আমাদের ভাল-মন্দ— দুটোই শেখা উচিত। নিচু মানসিকতার মানুষরাই এমন মন্তব্য করতে পারেন!\’

বিজেপিও এখন সোমের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছে। বিজেপি নেতা জিভিএল নরসিংহ রায় বলেন,\’যে যাঁর নিজের মত প্রকাশ্যে বলতেই পারেন। কিন্তু, তাই বলে সেটাকেই আমাদের পার্টি লাইন বলে ধরে নেওয়ার কোনও মানে নেই।\’

সোমের ওই মন্তব্যের পরে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন,\’লালকেল্লাও তো মুগলরা বানিয়েছিল। তা হলে কি মোদীজী এ বার থেকে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা ভাষণ দেওয়া বন্ধ করে দেবেন?\’

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোম ওই মন্তব্য করেছিলেন, তা ছিল একটি বুকলেট। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে সেটি প্রকাশিত হয়। রাজ্যে পর্যটনের প্রসার ঘটাতে প্রকাশিত ওই পুস্তিকায় রাজ্যের বেশ কিছু ট্যুরিস্ট স্পটকে তুলে ধরা হয়। সেখানে গোরক্ষপুর মন্দির থাকলেও বাদ পড়ে তাজমহল। এর পরেই বিরোধীরা সরব হয়। দেশীয় তো বটেই, বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও অভিযোগ করা হয়, যোগী সরকারের হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণেই উপেক্ষিত তাজ। মুসলিম আমলে তৈরি হওয়ার জন্যই তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রথমে যোগী আদিত্যনাথও একই ধরনের মন্তব্য করেন। জানিয়ে দেন, তাজমহল এ দেশের ঐতিহ্য নয়। কিন্তু, পরে চাপের মুখে তিনি ও তার সরকার উল্টো কথা বলেন। সেই বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, ফের একই বিতর্কে ঘি ঢাললেন সঙ্গীত সোম। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে যোগী সরকারকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর   ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top