চাকমাদের নাগরিকত্বে হ্যাঁ, রোহিঙ্গা আশ্রয়ে না ভারতের

নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে ভারত বলছে, মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে চায় নয়াদিল্লি। কিন্তু বৌদ্ধ অধ্যুষিত অরুণাচল প্রদেশে বসবাসকারী প্রায় এক লাখ চাকমা শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কি না সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৬০ সালের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে জাতিগত সংখ্যালঘু এই চাকমারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পালিয়ে যায়। অভিযোগ আছে, ধর্মীয় কারণে তারা নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চাকমারা ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

চাকমারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী; হাজংরা হিন্দু। এই দুই গোষ্ঠী ভারতে প্রবেশ করে মূলত আসামের (বর্তমানে মিজোরাম) লুসাই হিল ডিস্ট্রিক্ট সীমান্ত দিয়ে। পরে অরুণাচলে ছড়িয়ে পড়ে তারা।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই শরণার্থীদের সংখ্যা ১৯৬৪-৬৯ সালের দিকে পাঁচ হাজার থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে এক লাখে পৌঁছেছে। এই শরণার্থীরা সামান্য অধিকার ভোগ করলেও তাদের অনেকেই জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থায় নিবন্ধিত নয়। যে কারণে সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যায় আসামসহ অন্যান্য প্রদেশে সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়।

‘শনাক্তকরণের কাগজপত্র ছাড়া, রাজ্য সরকারের কোনো সমর্থন পান না তারা। এই শরণার্থীরা গণমাধ্যম এবং সরকারের দৃষ্টির আড়ালে শূন্য রেখায় আটকা আছেন। বাংলাদেশ কিংবা ভারত, কোনো দেশের সরকারই তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। শূন্য রেখায় আটকা এই শরণার্থীরা এমনকি কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য উপযুক্তও বিবেচিত হয় না- ওয়ার্ল্ড ভিশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুনাল শাহ এসব কথা বলেন।

২০১৫ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট চাকমাদেরকে নাগরিকত্বের অনুমতি দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। এছাড়া এই রায় পুনর্বিবেচনা করতে অরুণাচল প্রদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিম কোর্ট।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা কান্ডু বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, চাকমাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে রাজ্যের জনসংখ্যায় পরিবর্তন আসবে।

তবে চাকমারা বসবাসের জন্য নিজস্ব কোনো ভূখণ্ড অধিগ্রহণের অনুমতি পাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজনাথ। যেসব শরণার্থীরা প্রত্যন্ত অঞ্চল, বনাঞ্চল বসবাস করেন; তাদেরকে অভ্যন্তরীণ লাইন পারমিট দেয়া হতে পারে।

এদিকে রাখাইনের সহিংসতায় ভারতে ঢুকে পড়া ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীকে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে ভারত তাদেরকে ফেরত পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে নয়াদিল্লি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ভারতের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ভারত এমন এক সময় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যখন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম