যে কারণে শিরোনামহীন ছাড়লেন তুহিন

হঠাৎ করেই ব্যান্ড শিরোনামহীন ছাড়ার ঘোষণা দিলেন ব্যান্ডটির প্রধান ভোকাল তানযীর তুহিন। শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট ও ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ব্যান্ড ছাড়ার বিষয়টি সবাইকে জানান তিনি।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, আমি তানযীর তুহীন, ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামহীন ব্যান্ড থেকে সরে যাচ্ছি।

তবে কী অন্য ব্যান্ডের মতোই ভাঙনের শিকার শিরোনামহীন?

জানা গেছে, গত ২১শে সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তুহিন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি ছিলেন। তার হার্টের রক্তনালীতে ছোট্ট একটা ব্লক পাওয়া গেছে। অস্ত্রোপচার লাগেনি। চিকিৎসক বলেছেন ওষুধেই ঠিক হয়ে যাবে। এক মাস চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে বলেছেন তাকে চিকিৎসক। তাহলে ব্যান্ড ছাড়ার আসল কারণটা কি? তুহিন বলেন, আমি যখন অসুস্থ, তখন ব্যান্ডের সদস্যদের কাছে বন্ধুত্বের চেয়ে অর্থ মুখ্য হয়ে যায়। তারা একটি শোও মিস করতে চায়নি।

ভেবেছে আমি সুস্থ হব না, গান গাইতে পারব না। আমার জায়গায় আরেকজন কণ্ঠশিল্পীকে যুক্ত করে তারা। আমার একটাই প্রশ্ন এক মাস শো না করলে শিরোনামহীন ব্যান্ডের কী এমন ক্ষতি হতো? কিছু টাকা না হয় কম আয় হতো। ১৯৯৬ সাল থেকে আমি শিরোনামহীনে রয়েছি। ব্যান্ডের ফাউন্ডার মেম্বার আমি। ২১ বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমি এই সময় নিজের কথা ভাবিনি, পরিবারের কথা ভাবিনি। ভেবেছি কেবল ব্যান্ড নিয়ে।

এ ব্যাপারে ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওর এই বক্তব্যে আমরা খুবই মর্মাহত। আমরা মোটেও অর্থলোভী নই। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা, প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়ে ওর খোঁজ নেওয়া, পরে ওর বাসায় যাওয়া—এই সব কাজই আমরা করেছি। এরপর ওর কাছ থেকে এমন বক্তব্য আশা করিনি। আমি বলব, ও আমার বন্ধু না।’

জিয়া বলেন, ‘ফেসবুকে তুহিন এমন স্ট্যাটাস দেবে, আমরা তা ভাবতেও পারিনি। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর ৩ অক্টোবর আমরা তার বাসায় গিয়েছিলাম। তখন ব্যান্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য তুহিন নিজে থেকেই আরেকজন অতিথি কণ্ঠশিল্পী নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ, ওকে দীর্ঘ সময় বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর আবার ওর পরীক্ষা করে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এসব নিয়েও ওর সঙ্গে কথা হয়। আমরা ওকে কোনো কিছু ভাবতে নিষেধ করেছি। সেদিন হাসাহাসি করে আমরা ওর বাসা থেকে বেরিয়ে আসি।’

জিয়া বলেন, তুহিন ২০০০ সালে শিরোনামহীন ব্যান্ডে যোগ দেন। শিরোনামহীনের গানের সংখ্যা ৬০। এর মধ্যে ‘নদী’, ‘হয়না’, ‘পরিচয়’, ‘সূর্য’, ‘পরী’ আর ‘আহত কিছু গল্প’ গানগুলোর স্বত্ব তুহিন দাবি করতে পারেন। এ ছাড়া অন্য সব গানের স্বত্ব শিরোনামহীনের।

গতকাল বিকেলে নিজেদের এক বৈঠকে শিরোনামহীনের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন থেকে এই গানগুলো তাঁরা আর করবেন না। এখানে তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, ব্যান্ডের গানের ক্ষেত্রে সব স্বত্ব কোনো ব্যক্তি নয়, ব্যান্ডেরই থাকে।

ব্যান্ডে নতুন সদস্য যুক্ত করার ব্যাপারে জিয়া বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে যুক্ত করিনি। শিরোনামহীন ব্যান্ডের হয়ে যে-কেউ স্টেজে উঠতে পারবে না। তার সেই যোগ্যতা থাকতে হবে।’

শিরোনামহীনের আগামী দিনের পরিকল্পনার ব্যাপারে জিয়া বলেন, ‘তুহিনকে ছাড়াই আমাদের জার্নি শুরু হচ্ছে। ভাঙা-গড়া ব্যান্ড-সংস্কৃতিতে খুব সাধারণ ঘটনা। আমরা তা নিয়ে মোটেও ভাবছি না।’

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ