সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ। বুধবার উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সামনে রেলগেট এলাকায় ছবিঃসংগৃহীত

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে ৬ ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সামনে রেলগেট এলাকায় অবরোধ করা হয়। এতে ঢাকা ও খুলনার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সব জেলার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়ে বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা রেলপথ ছেড়ে দেন। তখন জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনে আটকে থাকা ঢাকা থেকে আসা রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়া স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এর পর থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

দীর্ঘক্ষণ অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে কোনো ট্রেনই ঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ট্রেনের যাত্রীরা।

বেলা একটার দিকে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষমাণ ঢাকাগামী যাত্রী আবদুস সামাদ (৬২) বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে ট্রেনের অপেক্ষা করছি। কিন্তু অবরোধের কারণে এখনো ট্রেন আসেনি। স্টেশনমাস্টার জানালেন, ঢাকাগামী ট্রেনটি লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশনে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে আটকে আছে।’

আবদুস সামাদের মতো শতাধিক যাত্রীকে রেলস্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিকল্পভাবে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওমরা পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার বিমান ধরতে ঢাকায় যাওয়ার জন্য উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন রমজান আলী ও শামীম রেজা নামের দুই যাত্রী। তাঁরা বলেন, শিক্ষার্থীরা কয়েক দিন ধরে মহাসড়ক অবরোধ করছেন। এ জন্য তাঁরা বাসের টিকিট বাতিল করে ট্রেনের টিকিট কাটেন। সকালে স্টেশনে এসে শোনেন, ছাত্ররা রেলপথ অবরোধ করেছেন। পরে টিকিটের টাকা ফেরত চাইলেও দেয়নি। এখন বাধ্য হয়ে বাস ভাড়া করে ঢাকায় যেতে হবে। কারণ, রাত ১০টায় তাঁদের ফ্লাইট।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা । বুধবার বেলা দুইটার দিকে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা । বুধবার বেলা দুইটার দিকে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে ছবি: সংগৃহীত

উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার মনিরুল ইসলাম  বলেন, আজ সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই রেলপথে ১৪টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করার কথা ছিল। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। বেলা ২টা পর্যন্ত ৯টি আন্তনগর ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও সেগুলো এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি।

গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েক দিন ধরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে পথনাটক, শেকল ভাঙার গান ও প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন ও রোববার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া মহাসড়কে নবীন বরণ ও সেমিনার করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। গত রোববার সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আজ বাধ্য হয়ে তাঁরা রেলপথ অবরোধ করেন।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যে উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, ১৭ আগস্ট একনেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। আশা করছেন ওই সভায় এটি অনুমোদন হবে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত রেলপথ অবরোধ তুলে নিতে শিক্ষার্থীসহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এরপর সাতবার সংশোধনের পর টাকার পরিমাণ ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংগীত ও ব্যবস্থাপনা নামে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ৩৪ জন শিক্ষক, ৫৪ জন কর্মকর্তা ও ১০৭ জন কর্মচারী আছেন। পৌর শহরের শাহজাদপুর মহিলা কলেজ, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজসহ ভাড়া করা দুটি বাড়িতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা উল্লাপাড়ায় রেলপথ অবরোধ করায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা তিনটায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে কোনো ট্রেনই ঠিক সময় গন্তব্যে যেতে পারছে না।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলপথ অবরোধের কারণে সব মিলিয়ে ছয়টি আন্তনগর ট্রেন আটকা পড়ে। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশনে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি জামতৈল রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ভাঙ্গুড়াতে আটকে থাকে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যমুনা সেতু পূর্ব পার ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনে ও রংপুর এক্সপ্রেস পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ রেলস্টেশনে আটকে থাকে। খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদীতে আটকে থাকে।

রেলপথ অবরোধের কারণে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়ার লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশনে আটকে পড়ে। বুধবার বেলা দুইটার দিকে
রেলপথ অবরোধের কারণে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়ার লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশনে আটকে পড়ে। বুধবার বেলা দুইটার দিকে ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে আটকে যায়। একইভাবে ঢাকা থেকে আসা ট্রেনও আটকে যায়। বিকেল তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে কোনো ট্রেনই সঠিক সময়ে ছাড়তে পারবে না, পৌঁছাতে পারবে না।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গৌতম কুমার কুণ্ডু বলেন, সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ রেলপথ আটকে থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যাত্রীদের মধ্যে ওমরা হজযাত্রীসহ অসুস্থ রোগীরা আছেন। অবরোধকে কেন্দ্র করে ট্রেন চলাচলে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সংগৃহীত

Scroll to Top