হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসারের আড়ালে তিনি ‘মাদক-মোঘল‍’, নারীসহ গ্রেপ্তার

হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসারের আড়ালে মাদক কারবার করে আসছিলেন সোহেলে। নিজের কেনা দামি ফ্ল্যাটে বসেই বিক্রি করতেন ইয়াবা। সেই ফ্ল্যাটে আনাগোনা ছিল বেশ কিছু নারীর। মাদক বিক্রি ও নারীদের আনাগোনার কারণে ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের অন্য ৩৪টি ফ্ল্যাটের মালিকরা ছিলেন অস্বস্তিতে। প্রতিকার চেয়ে থানায় জিডিও করেছেন তাঁরা। হাইকোর্টে বেঞ্চ অফিসারের দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে কখনো ব্যারিস্টার, কখনো বিচারক বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর নাম মোরশেদুল হাসান সোহেল। গত ৬ আগস্ট এক নারীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগের ঝিলপারের তাঁর নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে। এ সময় তাঁর দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ।

সোহেল এর আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মাত্র এক দিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তারের সূত্রে ফের গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, গত ৬ আগস্ট তাঁর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান অভিযান চালিয়ে রানা মণ্ডল নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। এ সময় তাঁর কাছে ১০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানান, এই ইয়াবা তিনি মিরপুর এলাকার ‘মাদক সম্রাট’ সোহেলের কাছ থেকে কিনে এনেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে পরে যাত্রাবাড়ী থানা ও মিরপুর থানার পুলিশ ওই দিনই অভিযান চালায় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৩১৫ নম্বর বাড়ির (তাসমিম বিজয় অ্যাপার্টমেন্ট) চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে। সেখানে গিয়ে ফাতেমা ইসলাম চাঁদনী নামের আরেক খুচরা মাদক বিক্রেতাকে পায় পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আর সোহেলের কাছে পাওয়া যায় ৬০০ পিস ইয়াবা। পরে দুজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর তাঁদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় মাদক আইনে মামলা হয়েছে।’ মামলাটি তদন্ত করছেন মিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্ট শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সোহেলকে ইয়াবা কারবারি হিসেবেই গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তিনি হাইকোর্টে চাকরি করেন। সত্যি করেন কি না, তা জানার জন্য আমরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখব।’

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘মোরশেদুল হাসান সোহেল নামের একজন বেঞ্চ অফিসার রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি ওই শাখায় বেঞ্চ অফিসার হিসেবে অ্যাটাচ আছেন।’

গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে সোহেল মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়েছেন কয়েক বছর আগে। গত বছরও তাঁকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ; কিন্তু এক দিনের বেশি তাঁকে আটকে রাখা যায়নি। এবার তাঁকে গ্রেপ্তারের পর মিরপুর থানার পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে; কিন্তু রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি। পুলিশ বলছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় তাঁর সম্পদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিতে পারেনি তারা।

তবে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বিক্রির টাকায় তিনি দুটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। এর মধ্যে গত কোরবানির ঈদের আগে ৯৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনেছেন, যেটির ওপর এখনো নম্বর প্লেট পড়েনি। পুলিশের ধারণা, তাঁর বিপুল টাকা থাকতে পারে।

তাসমিম বিজয় অ্যাপার্টমেন্টের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভবনে সোহেল অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন এমন খবর ছিল আমাদের কাছে। এ কারণে আমরা এর প্রতিকার চেয়ে বছর দুয়েক আগে থানায় জিডি করেছিলাম; কিন্তু পুলিশ বলেছিল বিষয়টি দেখবে। এরপর তাঁর কিছু হয়নি। তিনি এসব করেই যেতে থাকেন।’

সোহেলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সাহেবগঞ্জ এলাকায়। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তিনি এখন বৃদ্ধ। ছেলের অন্যায় দেখেও কিছু করতে পারছেন না বলে পুলিশকে জানান তিনি।
:কালের কণ্ঠ