৫০ টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র!

পরপর দুইবার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে শরীফ। পরিবারও অস্বচ্ছল হওয়ায় কাজের জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠায়। শরীফ কাজ নেয় ঢাকার একটি গ্যারেজে। পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে সে। কিন্তু ঢাকায় এসেই কয়েকমাসের মধ্যেই শরীফ শিখে গেছে কীভাবে এই শহরে চলতে হবে।

বিভিন্ন কাজে নীলক্ষেতে যেতে হয় শরীফের। নীলক্ষেত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বানিয়েছে সে। খরচ মাত্র ৫০ টাকা। এই আইডি কার্ড দিয়ে বাসে স্টুডেন্ট ভাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে শরীফ।

শুধুমাত্র শরীফই নয় তার মতো ঢাকা শহরের আরও অনেকে স্টুডেন্ট না হয়েও নীলক্ষেত থেকে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বানিয়ে নিচ্ছে। অনেকে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না জানা ছোট কলেজে পড়াশুনা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড বানাচ্ছে। এই অবৈধ আইডি কার্ডগুলো তাঁরা ব্যবহার করছে বিভিন্ন প্রয়োজনে। তাই কোনো ছাত্র বৈধ আর কোন ছাত্র অবৈধ তা অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যাচ্ছে না।

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাসেই ছাত্রদের জন্য হাফপাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাফপাস নিয়ে ছাত্র ও চেকারদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন বাসে। তাই এখন বাসের চেকাররাও হাফপাস দেয়ার ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখছে। কিন্তু এই স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অনেক অছাত্ররাই স্বল্পমুল্যে ও সহজেই নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলগুলোতেও অনেক বহিরাগত ছাত্র ও অছাত্র থাকছে। হলে থাকার জন্য তাঁরা ক্যাম্পাসের নিকটে অবস্থিত নীলক্ষেত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড বানিয়ে নিচ্ছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বৈধ ছাত্রের হলে জায়গা হচ্ছে না সেখানে অবৈধ আইডি কার্ড দিয়েই অনেকে হলগুলোতে থাকছে নির্বিঘ্নে। নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে।

নীলক্ষেতে শুধুমাত্র অবৈধ আইডি কার্ডই পাওয়া যাচ্ছে না, বিভিন্ন সার্টিফিকেট, অভিজ্ঞতার সনদ, প্রশিক্ষণের সনদ ইত্যাদিও ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমানে অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেজন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সনদ চাওয়া হয়। কিন্তু অনেক চাকরি প্রার্থীরই অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নীলক্ষেত থেকে অভিজ্ঞতার সনদ বানিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করছে।

প্রায় সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কম্পিউটার পারদর্শিতার কথাও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু অনেক চাকরি প্রার্থীই চাকরির আগে কষ্ট করে কম্পিউটার শিখতে চায় না। শর্টকার্ট পদ্ধতি হিসেবে নীলক্ষেত থেকে কম্পিউটার পারদর্শিতার সনদ কিনে জমা দিয়ে দেয়। এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মচারী পেতে ব্যর্থ হয়।

ডিজিটাল যুগে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস খুব সহজে কেনা যাচ্ছে বা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু দরকারি জিনিস এত সহজে পাওয়ায় দেশের উন্নতি না হয়ে অবনতি হচ্ছে। ভালো ও খারাপের মধ্যে পার্থক্য করা যাচ্ছে না। কষ্ট না করেই হাতের নাগালে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। যথাযথ মনিটরিং ও ব্যবস্থা নেওয়া হলে শর্টকার্টে সফলতার মানসিকতা কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট ২০১৭,

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস