কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি

গেল ৬ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ভক্তদের মনে রাজ করে গেছেন তার জনপ্রিয় সব গান দিয়ে। তারপর আজ বুধবার রাজশাহীতে অনন্তকালের জন্য সমাহিত করা হলো তাকে। তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে এসে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, এন্ড্রু কিশোর ছিলেন বাংলাদেশের সম্পদ। কয়েক শতকেও তার মতো একজন শিল্পীর জন্ম হয় না। সংগীতের মানুষ হলেও তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়। তার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। তার নামে গড়ে তুলতে হবে প্রতিষ্ঠান।

রাজশাহী সিটি চার্চে এন্ড্রু কিশোরের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এন্ড্রু কিশোর শুধু রাজশাহীর শিল্পী ছিলেন না, তিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেরও শিল্পী ছিলেন। তার শূন্যতা পূরণ করার মতো এই মূহুর্তে কেউ নেই। পরবর্তীতে হয়ত কেউ আসবেন, কিন্তু এন্ড্রু কিশোর এন্ড্রু কিশোরই থেকে যাবেন।

তিনি বলেন, এন্ড্রু কিশোরের স্মৃতি ধরে রাখতে আমাদের অনেক কিছু করা দরকার। তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে এটা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছি। আর আমরা রাজশাহীতে তার নামে একটা সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই বিদ্যালয় থেকে যারা উঠে আসবে, তারা যেন এক সময় বলতে পারে-আমরা এন্ড্রু কিশোর সংগীত বিদ্যালয় থেকে এসেছি।

এন্ড্রু কিশোরের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, গুণী শিল্পীর জন্যে আমাদের যা করণীয়, তা করা অবশ্যই উচিত। এন্ড্রু কিশোরের নামে শুধু রাজশাহী নয়, ঢাকাতেও সংগীত চর্চারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করা যেতে পারে। এ জন্য করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমি ঢাকায় গিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব।

তিনি বলেন, আমি মেয়র হিসেবে রাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোরের নামে একটি সড়কের নামকরণ ও একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি ও স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ভাই আমরা দুজনে মিলে এন্ড্রু কিশোরের রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। এ ব্যাপারে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না।

এর আগে চার্চে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, এন্ড্রু কিশোর ছিলেন বাংলাদেশের অহংকার। আমরা গর্ব করে বলতে পারতাম, আমাদের একজন এন্ড্রু কিশোর আছেন। তার মতো লিজেন্ড পাওয়া কঠিন। জানি না এই শূন্যতা কবে পূর্ণ হবে, নাকি হবেই না।

তিনি বলেন, আমরা ক্রিকেটার, কেউ অভিনেতা কিংবা গায়ক। আমাদের দেশের প্রত্যেকটি মানুষ চেনে না। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর এমন একজন মানুষ ছিলেন, যাকে সবাই চেনে। দেশের জন্য তার যে অবদান আছে তা বিবেচনায় নিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। মহান এই শিল্পীর জন্মস্থান, বাড়ি, সংগীতের নানা উপকরণ-এসব নিয়ে জাদুঘর-সংগীত বিদ্যালয় করা যেতে পারে।

জনপ্রিয় সুরকার ইথুন বাবু বললেন, এন্ড্রু কিশোরের মতো একজন শিল্পী হাজার বছরেও জন্ম নেয় না। তার চলে যাওয়া যে কত বড় শূন্যতা সৃষ্টি করল তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। দেশকে তিনি অনেক দিয়েছেন, সেই মুক্তিযুদ্ধ থেকেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে গিয়ে গান গেয়ে তাদের উজ্জীবিত করেছেন। দেশের জন্য, দেশের সংগীতাঙ্গনে তার যে অবদান সেটি অস্বীকার করার সুযোগ কারও নেই। তাই তার বিষয়টি রাষ্ট্রকে বিবেচনা করতে হবে। আমরা তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।

কবরস্থানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা জায়েদ খান। তিনি বলেন, আমি ওনার কবরে একটু মাটি দিতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এন্ড্রু কিশোর বাংলা চলচ্চিত্রের গানের জগতে একটা অধ্যায়, একটা ডিকশেনারি। সেই সাদাকালো যুগ থেকে চলছে। কেউ বলতে পারবে না কণ্ঠটা পুরনো হয়েছে। তিনি আটবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। অবশ্যই তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। আমরা শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে এ আবেদন জানাব।

গত ৬ জুলাই রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় এন্ড্রু কিশোর মারা যান। তারপর থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়। শিল্পীর ইচ্ছা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই সন্তান ফেরার পর তাকে রাজশাহীতে সমাহিত করা হলো।