নায়িকা যখন প্রযোজক!

প্রযোজক হতে কী লাগে? অভিনয় শিল্পীদের অহরহ প্রযোজক হতে দেখা যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়। সারাবিশ্বে এমন রেওয়াজ চালু আছে। কেউবা একই সঙ্গে প্রযোজনা ও অভিনয়ের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। কেউবা সিনেমায় নাম লিখিয়ে দু-চারটায় অভিনয় করে প্রযোজক বনে যাচ্ছেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সোহেল রানা বাংলাদেশের সিনেমায় প্রযোজনা শুরু করলেন। যদিও তখন তার নায়ক পরিচয় ছিল না। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শাবানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না,রিয়াজ, ফেরদৌস, মাহফুজ, শাকিব খান সহ আরও অনেক দেশের প্রথম সারির অভিনয় শিল্পীদের ছবি প্রযোজনা করতে দেখা গেছে। ১৯৯৭ সালে ‘কপোতাক্ষ চলচ্চিত্র’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেন মৌসুমী। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত প্রথম ছবি ‘গরীবের রানী’। এরপর সেখান থেকে আরও কয়েকটি ছবি নির্মাণ হয়।

অভিনয় শিল্পী থেকে প্রযোজক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এইসব সিনেমা প্রযোজকের খাতায় অভিনয়শিল্পীদের নাম থাকলেও বাহিরের কেউ লঘ্নি করে। ইদানিংকালে ছবি প্রযোজনা হচ্ছে দু ভাবে। এক, নায়িকারা ধরে নিয়ে আসছে প্রযোজক। দুই, নায়িকারা নিজেরাই প্রযোজক বনে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, যেখানে একজন নায়িকা নিজের অবস্থান পোক্ত করতে সামর্থ্য হন না। তিনি কীভাবে প্রযোজক বনে যান? নায়িকা বনে যাওয়ার এই অর্থ উৎস কী? কোনো একটি সিনেমা প্রযোজনা করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। নায়িকারা যেসব মৌসুমী প্রযোজক ধরে নিয়ে আসছে। তারা এক বড় জোর দুই ছবির জন্য আসেন।

পরবর্তীতে নিজেই সরে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এরা সিনেমা শেষ করতে পারে না। কারণ একটি সিনেমা নির্মাণের বাস্তবিক ধারনা যে তার নেই। কেউ প্রলোভন দেখিয়ে তাকে নিয়ে আসে। সেই প্রলোভনের মোহে পরে শুরুটা জাকজমক হলেও প্রতিনিয়ত তা অন্ধকারের দিকে যায়। সিনেমা পরে অনিশ্চয়তায়। আর এ মৌসুমী প্রযোজকের সিনেমা নিয়ে কোন মাথাব্যাথাও নেই। তাদের ধান্দা তো সিনেমা নয়। যে পরিমাণ সিনেমা মহরতে আটকে আছে। তার অর্ধেক সিনেমা যদি মুক্তি পেত। তাহলে আজ আর ঢাকাই সিনেমা হলের সিনেমা খরা দেখা দিত না।

ঢাকাই ছবির অন্যতম শীর্ষ নায়িকা মাহিয়া মাহি সিনেমা প্রযোজনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও সে ঘোষণা আর শুটিং অবধি যায়নি। মাহির পাশাপাশি আরেক নায়িকা ববি ঘোষণা দিয়েছিলেন সিনেমা প্রযোজনা করেবেন। তার ঘোষণার রুপান্তর হয়েছে। ‘বিজলী’ নামের সে সিনেমার শুটিং শেষ। মুক্তি নিয়ে অনেকদিন ধরে জটিলতা চলছে। যদিও এটা ওপেন সিক্রেট এ সিনেমার প্রযোজক স্বয়ং পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। পপিও সিনেমায় লগ্নি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সে কৌশল কাজে দেয়নি। সে ঘোষাণারও কোন বাস্তব রূপ নেই। ‘মুসাফির’ ছবির নায়িকা মারজান জেনিফার নিজের প্রথম ছবিই প্রযোজনা করেন। অবশ্য এটাও ওপেন সিক্রেট।

পাশের দেশ ভারতের একটু খোঁজ নিলে, বলিউডে নায়কদের পাশাপাশি নায়িকারাও দর্শক টানার আনুষঙ্গিক বিষয় হয়েছে দিনকে দিন। নায়করা অনেক আগেই এবং নিয়মিত প্রযোজনা করছে। এখন সে যাত্রায় নায়িকারা নিয়মিত হয়েছেন। নায়িকা থেকে প্রযোজক বনে যাওয়া আনুশকা শর্মা সুনাম কুড়িয়েছেন। শুধুমাত্র নায়িকা তকমা নিয়েই থেমে থাকেননি। নামের পাশে বসিয়েছেন প্রযোজক তকমাও। তার প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘এনএইচ টেন’ব্যবসা সফল হয়েছিল। দ্বিতীয় ছবি ‘ফিল্লৌরী’ও প্রশংসিত হয়েছে। প্রযোজনার ক্ষেত্রে তিনি অল্প বাজেটে ছবি নির্মাণ করে থাকেন। স্টার কাস্ট না থাকলেও গল্পের জোরে সিনেমা লাভবান হয়।

বলিউডের চেয়ে এখন মার্কিন মূল্লুকেই বেশি দেখা যায় এ অভিনেত্রীকে। তিনি প্রযোজনার ক্ষেত্রে বলিউড চেয়ে ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক ছবিকে বেছে নিয়েছেন। মরাঠি, ভোজপুরি, পঞ্জাবির মতো আঞ্চলিক ছবিই প্রযোজনা করে থাকেন। হিন্দিতে তার ছবি ‘ম্যাডামজি’ নানা জটিলতায় আটকে আছে।

এক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারেননি সোনম কাপুর, দিয়া মির্জা, শ্রুতি হাসান, প্রীতি জিনতা , শিল্পা শেঠীরা। তাই প্রযোজনার খাতা লম্বা করতে পারেননি। পূজা ভাটও একজন দক্ষ প্রযোজক। মহেশ ভাটের ব্যানারে তিনি ছবি প্রযোজনা করে থাকেন। অপরদিকে নায়িকা হিসেবে টুইঙ্কল খান্না অতটা সুবিধা না করতে পারলেও প্রযোজক হিসেবে তিনি সফল। টুইঙ্কেল মূলত অক্ষয়কুমার অভিনীত ছবিগুলোই প্রযোজনা করে থাকেন। বাংলা ইনসাইডার অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময় : ১১৫৬ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ