বরিশালের উজিরপুরে রিমান্ডে নারীকে ‘যৌন নির্যাতন’, ‘স্পর্শকাতর স্থানে’ আঘাত

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে রিমান্ডে নিয়ে এক নারী আসামিকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের। গত শুক্রবার রিমান্ড শেষে ওই নারীকে বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের উজিরপুর আমলি আদালতে তোলা হলে তিনি এ অভিযোগ করেন। ওই নারীর চিকিৎসা ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদালত শের-ই বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারক মাহফুজুর রহমান আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে এক নারী কনস্টেবলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম।

নাহিদা খানম জানান, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বরুন চক্রবর্তী সেদিনই হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় এক নারীকে ২৬ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুন বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম উজিরপুর আমলি আদালত ওই নারীর দুই দিনের রিমান্ডে পাঠায়।

গত শুক্রবার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে নেওয়া হয়। তিনি এ সময় খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। এর কারণ জানতে চান বিচারক মাহফুজুর রহমান। ওই নারী আদালতকে জানান, রিমান্ডে পুলিশ তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছে। পরে আদালত নারী কনস্টেবল দিয়ে তাকে পরীক্ষা করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান বিচারক। আদালত তাকে চিকিৎসা প্রদান এবং নির্যাতনের বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালককে।

ওই নারীর আইনজীবী বলেন, “বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হেফাজতে আসামি মারা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার মক্কেলকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত দুই দিনের রিমান্ড দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক এবং স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করেছে, যা যৌন নির্যাতনের শামিল। এটা গুরুতর অন্যায়। আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করি।”

ওই নারীর ভাই বলেন, “আমার বোনকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও এক নারী কনস্টেবল। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাবেক এমপিকে দিয়ে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।”

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল হোসেন। তিনি বলেন, “হত্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে ওই নারীকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। মামলা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।”

শেবাচিম পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, আদালত ওই নারীকে চিকিৎসা প্রদান এবং নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে। এ বিষয়ে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান বলেন, “থানায় রিমান্ডের সময় ওই নারীকে শারীরিক বা যৌন নির্যাতন করা হয়নি। রিমান্ডে নিলে সবাই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে।”