গৃহকর্মীকে এক বছর ধরে ধর্ষণ করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী

কর্মজীবী বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে টানা ১ বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে। একাধিকবার বিচার চেয়েছেন এই ভুক্তভোগী গৃহকর্মী। কিন্তু তাকে হেনস্তা করা হয়েছে নানা অপবাদে। ফলে ২৪ বছরের ওই গৃহকর্মী বিচার না পেয়ে চেষ্টা করেন আত্মহত্যার। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তিনি প্রাণে রক্ষা পান।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ কর্মরত আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতি ভাড়া থাকেন। গত ৪ বছর ধরে তাদের বাসায় কাজ করে আসছিল ২৪ বছরের এক যুবতী গৃহকর্মী। অভিযোগ রয়েছে, গত চার বছর ধরে কাজ করলেও গৃহকর্মীকে কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি গৃহকর্তা। উল্টো ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তাদের বড় ছেলে আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১) তাকে ধর্ষণ করে আসছে দীর্ঘ এক বছর ধরে। পুলিশ অভিযুক্ত নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে গ্রেফতার করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরশফী গ্রামের আমজাদ মাহমুদ নিলয় ও তার বাবা আব্দুল মাজেদ পালিয়েছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ খুব দ্রুতই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অভিযুক্ত নিলয় বাবা-মায়ের সঙ্গে চাঁদপুরের বাসাতেই থাকতেন। তার বাবা-মা যখন কর্মস্থলে চলে যেতেন তখই যুবতী গৃহকর্মীকে একা পেয়ে এক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন নিলয়। এ বিষয়টি নিলয়ের বাবা এবং মাকে জানিয়েও অসহায় গৃহকর্মী কোনো প্রতিকার পাননি।

সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে আব্দুল মাজেদ দম্পতি অফিসে চলে গেলে সেই সুযোগে ওই গৃহকর্মীকে আবারও ধর্ষণ করে তাদের পুত্র আমজাদ মাহমুদ নিলয়। ঘটনাটি আবারও আব্দুল মাজেদ দম্পতিকে জানিয়ে গৃহকর্মী প্রতিকার চান। মা-ছেলে এতে রেগে গিয়ে দুজনে মিলে ধর্ষণের শিকার যুবতীকে নির্যাতন করে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৩০ এপ্রিল নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই যুবতী বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু আশপাশের লোকজন তাকে নিবৃত্ত করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি নজরে পড়ে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের। তিনি ঘটনার শিকার ওই যুবতীকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন ব্যবস্থা নিতে। পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, “বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেই। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত যুবক এবং তার বাবা পালিয়ে যায়। তবে তার মাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আশাকরি, খুব দ্রুতই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।”

তিনি বলেন, “২২ ধারায় ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। ঘটনা সত্য। বাড়ির আশপাশের লোকজনও আমাদের জানিয়েছে মেয়েটিকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতো তারা। বিষয়টি বাড়ির মালিককেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়। ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।” চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, “এ ঘটনায় গৃহকর্মী তরুণীর কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ওই পরিবারের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে গৃহকর্মীর।”

ইতিপূর্বে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শহরের ওয়ারলেস এলাকার বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় অভিযুক্ত আমজাদ মাহমুদ নিলয় ও তার বাবা আব্দুল মাজেদ পলাতক থাকায় নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।