জোকোভিচকে কাঁদিয়ে মেদভেদেভের নতুন ইতিহাস

নোভাক জোকোভিচ জানতেন সুযোগ বারবার আসে না। জানতেন বলেই, র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় কথা দিয়েছিলেন ইউএস ওপেনের ফাইনালে নিজেকে নিংড়ে দিবেন। কিন্তু প্রত্যাশার চাপ তাকে এতোটাই বশ করেছে যে ক্যালেন্ডার স্ল্যাম জয়ের ইতিহাস আর লেখা হয়নি। সার্বিয়ান এই টেনিস তারকাকে কাঁদিয়ে ৬-৪,৬-৪,৬-৪ গেমের সরাসরি সেটে বরং নিজের ইতিহাস লিখলেন দানিল মেদভেদেভ। তাতে এই বছর আর একক সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের তালিকায় রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালকে ছাড়ানো হলো না জোকোভিচের।

ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই জোকোভিচ শুরুতে একটু ঢিলেঢালা ভাবে খেলে শেষে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন। ১৯৬৯ সালে রড লেভারের পর প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে এক বছরে সব গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কীর্তির আশায় ফাইনালেও তেমনভাবেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পথে মেদভেদেভ এতোটাই দুর্বোধ্য ছিলেন যে, জোকোভিচকে দাড়ানোর কোনো সুযোগই দেননি। দেয়ালের মতো ডিফেন্স ও বুলেট গতির সার্ভে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন হারের প্রতিশোধ নিলেন এই রাশিয়ান তারকা।

ফিফা গেমসের ভক্ত মেদভেদেভ ভিন্ন ভাবে শিরোপা উদযাপন করেন। মাটিতে এমনভাবে লুটিয়ে পড়ে যান যে, দেখলে মনে হবে মাত্রই মারা গেছেন। ফিফা গেমসের ভাষায় ডেড ফিশ এই উদযাপনের পর তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি জোকোভিচ ও তার ভক্তদের প্রতি ক্ষমা চাচ্ছি। কারণ আমরা সবাই জানি, সে আজ কীসের জন্য এসেছিল। এই বছর এবং পুরো ক্যারিয়ারে আপনি যা অর্জন করেছেন, আমি কখনই কাউকে বলিনি, তবে আমার জন্য টেনিসের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ট খেলোয়াড়।’

তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে এসে মেদভেদেভ প্রথম শিরোপার দেখা পেলেন। মজার ব্যপার হলো ফাইনালের দিনই ছিল তার তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। খেলার ভীড়ে স্ত্রীর জন্য উপহার কেনার সময় পাচ্ছিলেন না। তাই ঠিক করেছিলেন শিরোপা জিতেই গ্যালারীতে থাকা স্ত্রীকে খুশি করবেন ২৫ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। সেটা করলেনও।

র‍্যাকিয়ের দুই নম্বর বাছাই বলেন, ‘টুর্নামেন্ট চলাকালীন, উপহার নিয়ে ভাবার সুযোগ পাইনি। যখন সেমিফাইনালে পৌছালাম, তখন ভাবলাম যদি হেরে যাই তাহলে দ্রুত উপহার কিনতে হবে আমাকে। কিন্তু যখন জিতে গেছি, তখন মাথায় আসল ফাইনালে যদি হেরে যাই তাহলে তো উপহার কেনার সুযোগ নেই। তাই ম্যাচটি আমাকে জিততেই হতো।’

এই হারের আগে চলতি বছর ২৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিলেন জোকোভিচ। পকেটে পুড়েছেন তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। স্বপ্ন পূরণ না হলেও নিউইয়র্ক ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত জোকোভিচ নিজেকে মনে করছেন সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে। যেখানে বরাবরই অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে তাকে। একই সঙ্গে প্রশংসা করেছেন মেদভেদেভেরও।

জোকোভিচ বলেন, ‘যদিও আমি জিতিনি তবুও বলতে চাই, আমার হৃদয় আজ আনন্দে ভরপুর এবং আমি সবচেয়ে সুখী মানুষ। কারণ, আপনারা আমাকে এই কোর্টে বিশেষ কিছু বানিয়েছেন। যা আগে কখনো মনে হয়নি। বর্তমানে যদি কেউ গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রাপ্য থাকে তাহলে সেটা মেদভেদেভ। সাবাশ, আমি নিশ্চিত আরও অনেক শিরোপা জিতবে তুমি।’