‘স্কুলে’ই তো যাওয়া হয় না সৌম্য-সাব্বিরদের!

তামিম ইকবালের চোট বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে একটি যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকার নাকি ইমরুল কায়েস—ব্লুমফন্টেইনে অন্তত এ প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি দলকে। নেমেছেন দুজনই। দুই ইনিংসে সৌম্য ১২ রান করেছেন। দুই ইনিংসেই সৌম্যের আউটের ধরন আবারও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, টেস্টে সৌম্যকে দিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করানো কেন? টেস্ট ওপেনারের সামর্থ্য সৌম্যের আছে কি?

এমন প্রশ্ন দলের আরেকজনকে নিয়েও নিয়মিত তোলা হয়—সাব্বির রহমান। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে দুই ইনিংস মিলে ৪ রান করে প্রশ্নটার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছেন সাব্বির।

দুজনই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান, বলকে ব্যাটের পাশ দিয়ে যেতে দেখলে ছেড়ে দেওয়ার বদলে হাঁকাতেই পছন্দ করেন বেশি। এমন ব্যাটসম্যানদের টেস্ট দলে ডাকলে সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবু এমন ব্যাটসম্যানদের দলে রাখার পেছনে কারণ হচ্ছে, মুহূর্তেই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন তাঁরা। শ্রীলঙ্কায় সৌম্য সেটা দেখিয়েছেনও। সাব্বিরও মাঝেমধ্যে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রান তুলে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দেন।

কিন্তু এই ‘মাঝেমধ্যে’টা যে টেস্টে দলে ঢোকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে যথেষ্ট নয়। ক্রিকেট দুনিয়ার নিয়ম হলো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করে টেস্টে জায়গা পান খেলোয়াড়েরা। কিন্তু সৌম্য-সাব্বিরের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। দুজনই সীমিত ওভারের ক্রিকেট দিয়ে দলে জায়গা করেছেন। সে ফর্ম দেখেই তাঁদের টেস্ট দলে ডাকা এবং চিরন্তন এক বিতর্কের জন্ম দেওয়া।

টেস্টে সৌম্য-সাব্বির দুজনেরই চারটি করে ফিফটি আছে। কিন্তু ইনিংস বড় করার অভ্যাস যে এখনো হয়নি, সেটার প্রমাণ এখনো সেঞ্চুরি পাননি দুজনের কেউ। এ অভ্যাসই যে গড়ে ওঠেনি তাঁদের। প্রথম শ্রেণিতেই যে সৌম্যের সেঞ্চুরি মাত্র একটি! টেস্টে এই ওপেনারের গড় ২৯.৩৬। সেটাও অনেক বেশি মনে হয়, যখন জানবেন শুধু প্রথম শ্রেণিতে তাঁর ব্যাটিং গড় ২৭.৬৫! প্রথম শ্রেণির চেয়ে টেস্টে যে কারও গড় বেশি হতে পারে, সেটা সৌম্য দেখিয়ে দিলেন!

সাব্বির অন্তত এমন বিস্ময় জাগাননি। ২৬.৬৬ টেস্ট গড়ের সাব্বিরের প্রথম শ্রেণির গড় ৩৪.৭২। তবে টেস্ট ক্রিকেটটা যে ঠিক তাঁর ধাতে নেই, সেটা মাত্র তিন সেঞ্চুরিতেই বোঝা যায়। সে তিন সেঞ্চুরির সবচেয়ে বড় ইনিংসটাও ১৩৬ রানের। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে যে সাব্বির-সৌম্য ব্যর্থ হবেন, এ আর এমন কী!

শঙ্কার বিষয় হলো, এই যে প্রথম শ্রেণির পরিসংখ্যান, এসবই বছরখানেক আগের কথা। এরপর যে আর প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নামেননি তাঁরা। এটা অবশ্য সবার জন্যই সত্য। জাতীয় দলে এলেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা আর স্থানীয় লিগে খেলতে নামেন না। টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই সাব্বির আর জাতীয় লিগে খেলেননি।

সাব্বির সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১৫ সালের অক্টোবরে। রাজশাহীর হয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে। সৌম্যও অভিষেকের পর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ।

টেস্টে খারাপ করলে সমালোচনা হবেই। কিন্তু ক্রিকেটাররা যদি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই না খেলেন, তবে টেস্টে ভালো করার উপায়ও তো নেই! ‘বেসিক’ ঠিক করতে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্রিকেটারদের জন্য স্কুলের মতো। সৌম্য-সাব্বিরদের সেই স্কুলেই যাওয়া হয় না। নিজেদের ভুলগুলো ঘষামাজা করে নেবেন, সেই উপায়ও মেলে না। স্কুলে না পাঠিয়ে তাদের যেন সরাসরি বসিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায়! টেস্ট মানে তো পরীক্ষাই! – প্রথম আলো

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, ০৯ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম